মানবজীবন আল্লাহপ্রদত্ত এক বিশাল নিয়ামত। জীবনের উত্থান-পতন আর প্রতিটি বাঁকে বাঁকে লুকিয়ে থাকে আল্লাহর অপার কারিশমা। আল্লাহ তাআলার কুদরত ও ফয়সালার প্রতি বান্দার যখন অগাধ আস্থা-বিশ্বাস আর সুধারণা থাকে, জীবনের কঠিন আর দুঃসহ দিনগুলোতে সে হতাশায় মুষড়ে পড়ে না। পাপের হাতছানি, লোভের লালসা তাকে লক্ষ্যচ্যুত করতে পারে না। বান্দার ঈমানী শক্তি, আমলের দ্যুতি আর তাকওয়ার ভূষণ বিপদসংকুল দিনগুলোতে তার জন্য কুদরতপ্রদত্ত এক রক্ষাব্যুহ তৈরি করে দেয়। নিন্দা, অপবাদ কিংবা জেল-জুলুম আর বিপথগামীদের চোখ রাঙানি মাড়িয়ে একসময় পৌঁছে যায় সাফল্যের শিখরে। ইতিহাস ঘাঁটলে এমন উদাহরণ মিলবে প্রচুর। তন্মধ্যে একটি উদাহরণ স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করেছেন। একেবারে নিজের ভাষায়, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ পবিত্র কুরআনে। সেই ঘটনা হলো, ‘নবী ইউসুফ আলাইহিস সালামের’ ঘটনা। একেবারে শিশুকালের স্বপ্ন, পিতার ব্যাখ্যা, ভাইদের ষড়যন্ত্র, কূপে নিক্ষেপ, বৃদ্ধ পিতার আক্ষেপ, মিশরের বাজারে বিক্রয়, শাসকের প্রাসাদে আশ্রয়, নারীর ফিতনাময় আহ্বান, নিজের চরিত্র ও ঈমান রক্ষা, জেলের কুঠুরিতে অবস্থান, স্বপ্নের ব্যাখ্যাদান, শস্যের গোলা সামলানো ও বিতরণের দায়িত্ব, ভাইদের সাথে দেখা, সন্তানহারা বেদনাকাতর পিতার সাক্ষাৎ এবং মিশরের সিংহাসনে সমাসীন! সব মিলিয়ে ঠাসবুননে গাঁথা এক রোমাঞ্চকর বাস্তবতা। যেখানে কূপে নিক্ষিপ্ত এক নিষ্পাপ শিশুর কঠিন পথ মাড়িয়ে মিশরের সিংহাসনে আসীন হওয়ার বিশদ বিবরণ রয়েছে। যার পুরোটাই বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কুরআনের ‘সূরা ইউসুফে’। এই সূরার পরতে পরতে রয়েছে যাপিত জীবনের অমূল্য শিক্ষা। যা অতি সংক্ষেপে, চমৎকার উপস্থাপনায় একেবারে হৃদয়ঙ্গম করে তুলে এনেছেন তরুণ লেখক মাওলানা আম্মারুল হক। তার ‘কূপ থেকে সিংহাসন’ বইটি পাঠককে ইতিহাস ও ইতিহাসের শিক্ষার পাশাপাশি জীবনের বাস্তবতায় ইসলামের প্রায়োগিক দিকটি উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে ইনশাআল্লাহ।
আম্মারুল হক। জন্মগ্রহণ করেছেন ১৯৯৯ সালের ৫ মে চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত বাঁশখালী থানায়। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে সম্পন্ন করেছেন কুরআনুল কারীমের হিফজ। এরপর কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রী তাকমিল সম্পন্ন করেছেন চট্টগ্রামের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম, হাটাহাজারী মাদ্রাসায়। মাদরাসায় পড়াশোনার পাশাপাশি পড়েছেন জেনারেল ধারায়ও। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি সম্পন্ন করে বর্তমানে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত আছেন। তরুণ উদীয়মান এই লেখক ও চিন্তক ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলেছেন বইজগতে। তার রচিত, অনুদিত ও সম্পাদিত বই দশের ঘর ছাড়িয়েছে। একাধিক বিষয়ে কাজ করলেও তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন গবেষণাধর্মী লেখায়।