‘আর রাহীকুল মাখতূম’ বই সম্পকে কিছু কথাঃ সীরাতে নববী প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর শেষ পয়গম্বরের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানব জাতির সামনে তা উপস্থাপন করেছিলেন। এর মাধ্যমে আল্লাহ পাক মানুষকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোয় এবং বান্দাদের বন্দেগী থেকে বের করে আল্লাহর বন্দেগীর মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছিলেন ।প্রিয় নবীর আদর্শ মুসলমানদের জন্যে এক বাস্তব নমুনা ও ঘটনাবহুল কর্মসূচী। এর আলোকে মুসলমানদের কথা ও কাজ নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হবে এটাই স্বাভাবিক। আল্লাহ রব্বুল আলামীনের সাথে মানুষের সম্পর্ক, আত্মীয় স্বজন, ভাই বন্ধুদের সাথে মানুষের সম্পর্ক আল্লাহর রসূলের আদর্শ অনুযায়ী হওয়া উচিত।হযরত আয়েশাকে (রা:) জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্র কেমন ছিল? তিনি বলেছিলেন, পবিত্র কোরআনই ছিল তাঁর চরিত্র।কাজেই যে ব্যক্তি দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় কাজে আল্লাহ পাকের পথের পথিক দুনিয়া থেকে মুক্তি পেতে চায়, তার জন্য আল্লাহর রসূলের অনুসরণ ছাড়া অন্য কোন পথ নেই। এ ধরনের মানুষকে যথেষ্ট ভেবে-চিন্তে, বুঝে-শুনে অবিচল বিশ্বাসের সাথে আল্লাহর রসূলের সীরাত অনুসরণ করতে হবে।আর রাহীকুল মাখতুম নামের এই গ্রন্থ আল্লামা শেখ ছফিউর রহমানের পরিশ্রমের চমৎকার ফসল। ১৩৯৬ হিজরিতে তিনি রাবেতায়ে আলামে ইসলামীর সীরাতুন্নবী রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন এবং এই গ্রন্থ প্রথম স্থান অধিকারের শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করে।
আল্লামা সফিউর রহমান মুবারকপুরি (১৯৪৩-২০০৬) পুরো নাম সফিউর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ আকবর ইবনে মুহাম্মাদ আলি ইবনে আব্দুল মুমিন মুবারকপুরি আযমি। তিনি একজন স্বনামধন্য ইসলামিক লেখক এবং ভারত উপমহাদেশের বিখ্যাত মুহাদ্দিস। তার লেখা রাসূল সা.-এর জীবনীগ্রন্থ আর-রাহিকুল মাখতুম সারা বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং বহু ভাষায় অনুদিত একটি বই আধুনিক সিরাতগ্রন্থ। তিনি ১৯৪২ সালের ৪ জুন ভারতের আযমগড় জেলার হোসাইনাবাদের মোবারকপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তিনি স্থানীয় শিক্ষকদের কাছে লেখাপড়া করেন এবং আরবী ভাষা, ব্যকরণ, সাহিত্য, ফিকাহ, উসূলে ফিকাহ, তাফসির, হাদিস ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। ১৯৬১ সালে তিনি শরীয়াহ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন একই সাথে মাদরাসায় শিক্ষকতা এবং লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৬৯ সালে মুবারকপুরের দারুত তালিম মাদরাসায় এবং ১৯৭৪ সালে বেনারসের জামিয়া সালাফিয়ায় শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৮ সাল হতে তিনি মদিনাস্থ আন্তজার্তিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাসূল সা. বিষয়ক গবেষণা ইন্সটিটিউটে কর্মরত থাকেন। সর্বশেষ রিয়াদের মাকতাবায়ে দারুস সালামে গবেষণার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়া বেনারসের মাসিক মুহাদ্দিস পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বও পালন করেছেন। আরবী ও উর্দু ভাষায় তাঁর রচিত গ্রন্থসংখ্যা ত্রিশোর্ধ্ব। ২০০৬ সালের ১ ডিসেম্বর জুমাবার বেলা দু’টায় এই নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে এই মহান মনীষী মাওলার সান্নিধ্যে চলে যান।