কিংবদন্তির কবি ছিলেন তিনি। শৈল্পিক ও লােকজীবনের হৃদয়ছোঁয়া সাবলীল কথকতা বিশিষ্ট ও স্বতন্ত্র করেছে তাঁকে। নিজস্ব, অননুকরণীয় কাব্যভাষা ছিল তাঁর সহজাত, অন্বিষ্ট ছিল। লােক-বাংলার সহজ সরল মানুষের মুক্তি ও প্রগতি। স্বতন্ত্র কণ্ঠের এই কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর জন্ম ১৯৩৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। মৃত্যু ১৯ মার্চ ২০০১। পড়াশােনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছিলেন। দারুণ মেধাবী ছাত্র । জাতির সেবা করেছেন দক্ষ ও সুযােগ্য প্রশাসক হিসেবে। পালন করেছেন সচিব, রাষ্ট্রদূত, মন্ত্রীর গুরুদায়িত্ব। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য এবং কৃষি সংস্থার আন্তর্জাতিক সহকারী মহাসচিব পদেও বৃত ছিলেন। অসামান্য সৌন্দর্যতৃষ্ণা, রুচিস্নিগ্ধ মনন, ঐতিহ্যপ্রীতি, তীক্ষ্ণ গভীর সাহিত্যবােধ ছিল তার প্রিয়, স্বপ্ন ও আরাধ্য। লােকজ ঐতিহ্যকে স্বভাবসুলভ পারঙ্গমতায় আত্মস্থ করে তিনি পরিবেশন করেছেন আধুনিকতার সংমিশ্রণে। নিপুণ শৈলীতে নান্দনিকতায় সুরভিত সুষমায় কাব্যগাথায় উপস্থাপন করেছেন। সরল, নিরাভরণ কিন্তু আশ্চর্য স্বাদু তাঁর কাব্যনির্মিতি ও কুশলতা, যা সহজেই মন ছুঁয়ে যায় পাঠকের। আত্মানুসন্ধানে, জীবন জিজ্ঞাসায় ব্যাপৃত সাধনামগ্ন ছিলেন এই কৃতী কবিপুরুষ। তার কবিতা নদীর স্রোতের মত স্বচ্ছন্দে প্রবহমান, তাঁর কবিতা মন্ত্রের মত শুদ্ধ এবং অমােঘ। একটি কবিতা থেকে উদ্ধৃতি“শৈশব অস্পষ্ট/কৈশাের আবছায়া নদী/ মসজিদ। ছুঁইছুঁই কীর্তনখােলা/ ছুটিতে দেশের বাড়ী/ হােগলার পাটি,/প্রাচীন ব্রহ্মপুত্র/তার তীরে ছােট্ট শহর/সেইখানে মা সমাহিত।/কিন্তু এখনাে ভােরে/ বাঁশী শুনি/পাখীদের গান,/বাবা ওঠ/এ্যাই বাবা কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, কবিতালাপ সাহিত্য পুরস্কার। তাঁর প্রাপ্ত আরাে সম্মাননা ও স্বীকৃতি হচ্ছে : ফেলাে, সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। ফেলাে, ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টার (Poet in residence), হাওয়াই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইংরেজি ভাষায় রচিত তার উল্লেখযােগ্য গ্রন্থসমূহ 2009 Yellow Sand hills China through Chinese Eyes, Rural Development: Problems and Prospect. Creative Development, Food and faith. প্রিয়ভাষী, অসামান্য বন্ধুবৎসল, মহৎ মনের কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ছিলেন বাংলাদেশ সেন্টার অব এ্যাডভান্সড স্টাডিজের চেয়ারম্যান, কবিসংঘ পদাবলী’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।