ভূমিকা পশ্চিম এশিয়ার মরুঅঞ্চলে বেদুইন বা দস্যুসর্দারেরা পেরোয়া ঘোড়া ছুটিয়ে চলে। আঁর তারই সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সে দেশে কল্পনার ঘোড়াও ছুটে চলে বল্গাহীন।
বাস্তবের বেড়াজালে বাঁধা জীবনের কল্পনার অবাধ বিহার আমাদের কত অবাস্তব রাজ্যেই না ঘুরিয়ে এনেছে। আরব্য উপন্যাসের অজস্র বৈচিত্র্য ভরা অভিজ্ঞতার সঙ্গে আমাদের অনেকদিনের পরিচয় চাহার দরবেশের বিচিত্র কাহিনীর ঘটনাস্থলের কেন্দ্র পশ্চিম এশিয়া, কিন্তু কাহিনীর রচনাস্থল ভারতবর্ষ, দিল্লী। ভারতে তখন পশ্চিম এশিয়ার ধর্ম, সভ্যতা ও সংস্কৃতি এসে তক্তা পেসে বসেছে। মাটির সঙ্গে তার কোন সংযোগ স্থাপিত হয়নি। তবু চাহার দরবেশের কাহিনী যে ভাবে গ্রথিত, লিপিবদ্ধ ও প্রচারিত হয়েছে তাতে প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্য সম্পূর্ণ রক্ষিত হয়েছে। দাস বংশীয় সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন তখন দিল্লীর তখ্তে। সেই সময় বিখ্যাত সাধক ফকির নিজামউদ্দিন আউলিয়াও দিল্লিতে বাস করতেন। ফকির সাহেব অসুস্থ। তাঁর ভক্তদের মধ্যে অন্যতম এবং শিষ্টি কবি আমীর খসরু (১২৫৩ খ্রি.-১৩২৫ খিঃ) তাকে, গল্প বলে খোশ মেজাজে রাকার প্রয়াসে চার দরবেশের কাহিনী বিবৃত করেন। ফকির সাহেব মনে কতটা তৃপ্তি পেয়েছিলেন তার কোন সাক্ষ্য নেই, তবে কাহিনী শুনতে শুনতে তাঁর রোগ উপশম হয়ে যাওয়ার ফলে তিনি প্রসন্ন হয়ে বর দিয়েছিলেন, চার দরবেশের কথা অমৃত সমান, শ্রবণে যতেক ব্যাধি হবে অবসান। কাহিনী কিন্তু প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্যমত শ্রুতিতেই রয়ে গেল। প্রচলন পারস্য দেশেই হল সমধিক। আমীর খসরু ছিলেন ফার্সি ভাষার কবি, সাধক নিজামউদ্দিনও ছিলেন ফার্স ভাষী। চার দরবেশের গল্প প্রথম গ্রন্থরূপ লাভ করে এই সেদিন। ভারতে ঈস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বণিকের মানদণ্ড ফেলে রাজদণ্ড ধারণ করে বসেছে। মার্কুইস অব ওয়েলেসলি তখন গর্ভনর জেনারেল । সেই সময় খসরুর রচিত কিস্মা-ই-চাহার দরবেশ মীর আম্মান কর্তৃক উর্দু ভাষা লিপিবদ্ধ হয়- সেই অনুবাদ গ্রন্থের নামকরণ হয় ‘বাগ ও বাহার’। জনসংযোগের প্রয়োজনে শাসক সমাজে উর্দু ভাষা শিক্ষার গুরুত্ব তখন অনুভূত এবং সেই জন্যই বাগ ও বাহার গ্রন্থের প্রচারে কোম্পানি যথেষ্ট পোষকতা করেছিল। এই রচনা ও প্রচারকার্যে অগ্রণী ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মচারী মিঃ জন গিলক্রাইস্ট।
সূচিপত্র * প্রথম দরবেশের কথা * সুন্দরী আত্মকথা * দ্বিতীয় দরবেশের কাহিনী * আজাদ বখতের কাহিনী * বণিকের কাহিনী * আজাদ বখতের শেষ কথা * তৃতীয় দরবেশের কথা * চতুর্থ দরবেশের কথা * শেষের কথা