জীবন ছাড়িয়ে কোনো মানবীয় অভিজ্ঞতা থাকা কি সম্ভব? কবির অভিজ্ঞতা যা আকাশ পাতাল সমস্তই উপলব্ধি করে নিতে চায় তাও তো মানবীয়। -কেন লিখি : জীবনানন্দ দাশ আবহমান বাংলা কবিতার প্রথম সারির কবি তিনি। আধুনিক বাংলা কবিতার সম্রাট তিনি। বিংশ শতাব্দীর বিশ্বকবিতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিপুরুষ তিনি। কবি এবং কবি। কবি ছাড়া আর কিছুই নন। তাই তিনি ‘শুদ্ধতম কবি'। আজ আমরা জানি যে জীবনানন্দ নিঃশব্দে গল্পের পর গল্প লিখে গেছেন ; উপন্যাসের পর উপন্যাস; এমনকি তাঁর গল্পউপন্যাসের বাইরে গদ্যরচনার পরিমাণও নিতান্ত কম নয় ; – কিন্তু তাহলেও তার তাবৎ রচনার মধ্য দিয়েই বিকিরিত হচ্ছে তার অবিচ্ছেদ্য অপ্রতিরোধ্য অনাক্রমণীয় কবিপ্রতিভা| জীবদ্দশায় জীবনানন্দকে ঘিরে সপ্তরথীর আক্রমণ চলেছিলো : রবীন্দ্রনাথ রচনা করেছিলেন দু-ছত্রের প্রশংসাবাক্য ; জীবনানন্দের কাকুতি সত্ত্বেও প্রমথ চৌধুরী তাও করেননি ; অতুলচন্দ্র গুপ্ত, ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, আবু সয়ীদ আইয়ুব, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত – সমকালীন শ্রেষ্ঠ মনীষীরা ছিলেন নীরব ; ‘আধুনিক বাংলা কবিতা সংকলনের ভূমিকায় হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় নিঃশব্দ ; সুভাষ মুখোপাধ্যায়-ননী ভৌমিক- মনীন্দ্র রায়েরা ছিলেন। ততোটাই বিরূপ যতোখানি সজনীকান্ত দাসবনফুলেরা। অদ্ভুত এক দুর্ভাগ্য তাকে সাহিত্য-ওব্যক্তিজীবনে ক্রমাগত যেন চোরকুঠুরিতে ঠেলে ঢুকিয়ে দিয়েছিলো। চাকরি থাকে না। স্ত্রী বিমুখ। প্রকাশক নেই। ব্যক্তি-ও-সাহিত্য-জীবনের এই ভাগ্যহীনতা তাকে টেনে নিয়ে যায় রিলকে-আরাধ্য বিজন সেই দুর্গম দুর্গে, যেখানে তিনি নিজের মুদ্রাদোষে কেবলি আলাদা হয়ে যেতে থাকেন – সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র – অভিনব| অভিনব ; কিন্তু ঐতিহ্যকে অস্বীকার করে নয়। সত্যেন্দ্রনাথ ও যতীন্দ্রনাথ, মোহিতলাল ও নজরুল ইসলাম, ইয়েটস ও ডিলান টমাস, এমনকি কালিদাস রায় ও কুমুদরঞ্জন মল্লিকদের হাত ধরে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ এমন-এক আত্মপৃথিবীতে তিনি প্রবেশ করেন, যেখানে তার আর পূর্বসূরি কেউ নেই, হয়ে ওঠেন নিজস্ব এক দ্বীপের অধিবাসী। না, শেষ-পর্যন্ত দ্বীপ নয়, মূল ভূখণ্ডই জীবনানন্দ।
আবদুল মান্নান সৈয়দ (৩ আগস্ট ১৯৪৩ - ৫ সেপ্টেম্বর ২০১০) বাংলাদেশের একজন আধুনিক কবি, সাহিত্যিক, গবেষক ও সাহিত্য-সম্পাদক। তিনি ২০০২ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের "পোয়েট ইন রেসিডেন্স" ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর ষাট দশক থেকে বাংলা সমালোচনা-সাহিত্যে তার গবেষণাধর্মী অবদান ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। কাজী নজরুল ইসলাম ও জীবনানন্দ দাশের উপর তার উল্লেখযোগ্য গবেষণা কর্ম রয়েছে। তিনি ফররুখ আহমদ, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিষ্ণু দে, সমর সেন, বেগম রোকেয়া, আবদুল গনি হাজারী, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী, প্রবোধচন্দ্র সেন প্রমুখ কবি-সাহিত্যিক-সম্পাদককে নিয়ে গবেষণা করেছেন। বাংলাদেশের সাহিত্যমহলে তিনি 'মান্নান সৈয়দ' নামেই পরিচিত ছিলেন।