“তোমার জন্যে" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ বাংলাদেশের কাব্যসাহিত্যে শহীদ কাদরী বর্তমান সময়ে তাে বটেই, আগামী বহুকালাবধি এক প্রােজ্জ্বল বিগ্রহ হিসেবে দীপ্যমান থাকবেন। অথচ তিনি যে প্রচুর লিখেছেন, এমনও নয়। তা হলে কী সেই কারণ যার জন্য বিরলপ্রজ হয়েও অবিস্মরণীয় হয়ে ওঠা যায়? কারণ অন্য কিছু নয়, শুধুই তার প্রবল স্বাতন্ত্রিকতা। তিনি স্বতন্ত্র কথনভঙ্গিমায়, স্বতন্ত্র লক্ষ্য নির্বাচনে, স্বতন্ত্র ঋজুতায় ও শাবল্যে। অজস্র কবিকণ্ঠের ভিতরেও তার কণ্ঠ সহজে ও অনিবার্যভাবে শনাক্ত করে নেওয়া যায়। অবিসংবাদিত নাগরিক ও আধুনিক কবি হিসেবে যার প্রতিষ্ঠা আমাদের কাব্যজগতে বিগত শতকের | অন্ত্য-ষাটের দশক থেকে, তার ভিন্নস্বাদী গােত্রের। কবিতামালা আসন পেতেছে বর্তমান সংকলনে। আত্মপ্রত্যয়ী সংযমী ও অনতিপ্রজ কবি শহীদ কাদরীর এ-যাবৎ প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থাদি থেকে প্রেমের পঙক্তিমালা চয়ন করে এই সঞ্চয়ন নির্মিত হয়েছে। শহীদ কাদরীর প্রেমের কবিতা কি ভিন্ন কোনাে কবি-আত্মার মুখােমুখি করে আমাদের? একক ব্যক্তিমানুষের অন্তর্লগ্ন হয়ে যেমন থাকে একাধিক জন, তেমনি একই কবির মুখচ্ছদে খেলা করে। হয়তাে-বা ভিতরে-রয়ে-যাওয়া বহু অন্তরাত্মা। কবি শহীদ কাদরীকে বুঝে নেওয়ার জন্য তাই ‘তােমার জন্যে কাব্যের পাঠ জরুরি হয়ে দেখা দেয়।
শহীদ কাদরী জন্ম ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট কলকাতায়। কবিতা লেখার শুরু পঞ্চাশের দশক থেকেই। প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯৫৬ সালে। পঁচিশ বছর বয়সে ১৯৬৭ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘উত্তরাধিকার প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘তােমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালে। এর চার বছর পর তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ কোথাও কোনাে ক্ৰন্ধন নেই’ প্রকাশিত হয়। ১৯৭৮ সালে দেশ ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। যান জার্মানিতে। সেখানে মাস তিনেক থাকার পর যান লন্ডনে। প্রায় চার বছর ইংল্যান্ডের শহরে-বন্দরে ঘুরে, ফিরে আসেন বাংলাদেশে। যােগ দেন দৈনিক সংবাদে। কিন্তু বেশি দিন কাজ করতে পারেন নি। ১৯৮২ সালের শেষে এক শীতার্ত রাতে আবার পাড়ি জমান। লন্ডনে। সেখান থেকে মার্কিন মুলুকে। ২০ বছর বস্টনে থাকার পর কবি শহীদ কাদরী ২০০৪ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিউইয়র্কে বসবাস করেন। মৃত্যু : ২৮ আগস্ট ২০১৬, নিউইয়র্ক সিটি। নাজমুন নেসা পিয়ারি, কবি, অনুবাদক ও গবেষক, সম্পাদক দীর্ঘদিন ধরে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় কাজ করছেন দেশে ও বিদেশে। বর্তমানে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত। পুরস্কার : বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ অর্জন করেছেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ পুরস্কার ২০১৬।