‘তোমারি ঝরণাতলার নির্জনে/মাটির এই কলস আমার ছাপিয়ে গেল কোন ক্ষণে’–এই গানের বাণীকে তাৎপর্যে উদ্ভাসিত করবার জন্য কোনো কোনো স্থলে অব্যবহিত অর্থপ্রকাশে সুরের বিশেষ যত্ন রয়েছে, আবার পাশাপাশি রয়েছে সুরের খেলা—তান। তানের লীলাউচ্ছল গতি ঔজ্জ্বল্য বিকীর্ণ করে। কিন্তু ভেবে দেখলে, যে-সুরে বাণী উচ্চারণ বিশিষ্ট হয় তা সুচারুভাবে বলবার পর তানে উচ্ছ্বসিত হওয়া যেন অবসর বিনোদনের মতো। যত্নের ভাবটির চারপাশে তান সুদৃশ্য নকশা এঁকে দেয়, ভাবটিকেই প্রধান করে তুলবে বলে। নির্জন ঝরণাতলায় মনের পাত্র যখন কানায় কানায় ভরে উপচে পড়ে, তখন চিত্তকে প্রয়োজন ছাপিয়ে যাওয়া অসীম সুরের ধারায় স্নান করাবার বাসনা। দিনের প্রয়োজনের তৃপ্তি-অতৃপ্তি থেকে মনকে মুক্ত করবার সিদ্ধান্ত ক্লান্তির অস্তিত্ব সূচিত করে। সুরের ফুলকারি মনের তাপ-বিমোচনের আবহ সৃষ্টি করতে থাকে। মেটে বা নাই মেটে তা’ বলতে সুরে ঘনীভূত বেদনা ‘ভাবব না আর তার তরে’ বলবার কারুখচিত সুরে নিবৃত্তি খোজে। সব মিলিয়ে সুরের কারুকার্যে—তানের গতিতে উৎসাহ সঞ্চার হয়, আর দৈনন্দিনতার উর্ধ্বে উঠবার তত্ত্ব সুরের গতিতে ছন্দিত হয়ে মনকে পদে পদে ভারমুক্ত করতে থাকে। শুধু এটুকু নয়, আরো অনেক কথা এই একটি গান থেকে মনে জাগতে পারে। এরকম এক একটি গানের ভাষা ও অলংকরণ, ছন্দ ও সুরের সামগ্রিক সৌন্দর্য অখণ্ড ভাবসম্পদ রূপে মনে আভাসিত হয়। সে-সৌন্দর্যকে উল্টেপাল্টে আস্বাদন করতে চাইলে গঠনশিল্পের নানাদিক থেকে তাকে ফিরিয়ে ফিরিয়ে দেখা চলে। তাতে সৌন্দর্যের আস্বাদ বাড়ে বই কমে। উপরন্তু, উপলব্ধি গভীরতর হয়। এইরকম ধারণা থেকে সন্ধানী চিত্ত রবীন্দ্রসংগীতের ভাবসম্পদের অন্বেষণে প্রবৃত্ত হতে পারে। সকল সন্ধানেরই পরিকল্পনা থাকে। আবার সেই পরিকল্পনামতো অগ্রসর হবার পূর্বে পরীক্ষামূলকভাবে তা কিছুটা নাড়াচাড়া করেও দেখা যেতে পারে। এইরকম নিরীক্ষামূলক প্রেমের গান সংক্রান্ত একটি প্রবন্ধ এখানে সন্নিবেশ করে সমগ্র সন্ধানের প্রকৃতিটি তুলে ধরবার চেষ্টা করব। নির্জন ঝরণাতলায় মনের পাত্র যখন কানায় কানায় ভরে উপচে পড়ে, তখন চিত্তকে প্রয়োজন ছাপিয়ে যাওয়া অসীম সুরের ধারায় স্নান করাবার বাসনা। দিনের প্রয়োজনের তৃপ্তি-অতৃপ্তি থেকে মনকে মুক্ত করবার সিদ্ধান্ত ক্লান্তির অস্তিত্ব সূচিত করে। সুরের ফুলকারি মনের তাপ-বিমোচনের আবহ সৃষ্টি করতে থাকে। মেটে বা নাই মেটে তা’ বলতে সুরে ঘনীভূত বেদনা ‘ভাবব না আর তার তরে’ বলবার কারুখচিত সুরে নিবৃত্তি খোজে। সব মিলিয়ে সুরের কারুকার্যে—তানের গতিতে উৎসাহ সঞ্চার হয়, আর দৈনন্দিনতার উর্ধ্বে উঠবার তত্ত্ব সুরের গতিতে ছন্দিত হয়ে মনকে পদে পদে ভারমুক্ত করতে থাকে। শুধু এটুকু নয়, আরো অনেক কথা এই একটি গান থেকে মনে জাগতে পারে। এরকম এক একটি গানের ভাষা ও অলংকরণ, ছন্দ ও সুরের সামগ্রিক সৌন্দর্য অখণ্ড ভাবসম্পদ রূপে মনে আভাসিত হয়। সে-সৌন্দর্যকে উল্টেপাল্টে আস্বাদন করতে চাইলে গঠনশিল্পের নানাদিক থেকে তাকে ফিরিয়ে ফিরিয়ে দেখা চলে। তাতে সৌন্দর্যের আস্বাদ বাড়ে বই কমে। উপরন্তু, উপলব্ধি গভীরতর হয়। এইরকম ধারণা থেকে সন্ধানী চিত্ত রবীন্দ্রসংগীতের ভাবসম্পদের অন্বেষণে প্রবৃত্ত হতে পারে। সকল সন্ধানেরই পরিকল্পনা থাকে। আবার সেই পরিকল্পনামতো অগ্রসর হবার পূর্বে পরীক্ষামূলকভাবে তা কিছুটা নাড়াচাড়া করেও দেখা যেতে পারে। এইরকম নিরীক্ষামূলক প্রেমের গান সংক্রান্ত একটি প্রবন্ধ এখানে সন্নিবেশ করে সমগ্র সন্ধানের প্রকৃতিটি তুলে ধরবার চেষ্টা করব।
জন্ম ৪ এপ্রিল ১৯৩৩, ঢাকায় । শিক্ষা কামরুন্নেসা স্কুল, ইডেন কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শান্তিনিকেতনের । বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে । অধ্যাপনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে । তার ঐকান্তিক সহযােগিতায় গড়ে উঠেছে ‘ছায়ানট’ ও ‘জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের মতাে সংগঠন । ভাষা আন্দোলন, রবীন্দ্রশতবর্ষ উদযাপন, রমনা বটমূলে বর্ষবরণ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে বাঙালিত্বের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপনে তার অবদান অবিস্মরণীয়। তাঁর গ্রন্থের মধ্যে আছে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, রবীন্দ্রসংগীতের ভাবসম্পদ, ধ্বনি থেকে কবিতা, নজরুল-মানস, সহজ কঠিন দ্বন্দে ছন্দে, শান্তিনিকেতনের দিনগুলি। পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমি। পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের। রবীন্দ্র-পুরস্কার, বিশ্বভারতীর ‘দেশিকোত্তম উপাধি, ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘পদ্মশ্রী' ইত্যাদি।