সভ্যসমাজের বিকাশের সময় থেকে সমাজদর্শন ও রাষ্ট্রদর্শনের একটি প্রধান। বিষয় : সমাজে রাষ্ট্রের ভূমিকা। এই গ্রন্থ মুখ্যত রাষ্ট্র ও ব্যক্তির সম্পর্ক নিয়ে লেখা। কারণ, এ প্রশ্নটির উত্তরের উপরই নির্ভর করছে প্রত্যেক ব্যক্তি এ শতকে তার মনুষ্যত্বকে পূর্ণতা দিতে পারবে কি না, তার মীমাংসা। এই গ্রন্থে ছয়টি প্রবন্ধ সংকলিত। তার মধ্যে তিনটি প্রবন্ধ স্মারক-বক্তৃতা হিসেবে লিখিত। স্মারক বক্তৃতাগুলোয় বিষয়গত একটি ঐক্য আছে, তা হলো—সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে অধিকার আদায়ের জন্য বিশ্বব্যাপী ব্যক্তির নিরন্তর সগ্রাম, যা আমাদের দেশেও বারংবার নানাভাবে মূর্ত হয়েছে। সভ্যসমাজের বিকাশের সময় থেকে সমাজদর্শন ও রাষ্ট্রদর্শনের একটি প্রধান। বিষয় : সমাজে রাষ্ট্রের ভূমিকা। এই গ্রন্থ মুখ্যত রাষ্ট্র ও ব্যক্তির সম্পর্ক নিয়ে লেখা। কারণ, এ প্রশ্নটির উত্তরের উপরই নির্ভর করছে প্রত্যেক ব্যক্তি এ শতকে তার মনুষ্যত্বকে পূর্ণতা| দিতে পারবে কি না, তার মীমাংসা। অন্য দুটি প্রবন্ধ সাহিত্য বিষয়ক। বাংলা সমালোচনা| সাহিত্যকে, বিশেষত তুলনামূলক সমালোচনা-সাহিত্যকে বিশ্ব-মানে পৌছানোর জন্য যাদের অনন্যসাধারণ অবদান রয়েছে, তাদের মধ্যে কবি-সমালোচক শশাঙ্কমোহন সেন অন্যতম। তিনি বাংলা সমালোচনা-সাহিত্যকে যে কত ভাবে ঋদ্ধ করেছেন তার একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয় এখানে রয়েছে। কবি শামসুর রাহমান সম্পর্কে লেখাটি তার একটি কবিতা নিয়ে, যে-কবিতার অপার সৌন্দর্য পাঠকের কাছে তুলে ধরা কর্তব্য বলে বিবেচনা করেছি। বিপন্ন মানবতা’য় প্রবন্ধটিতে বাংলাদেশের মানুষকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া এবং তা থেকে বেরিয়ে আসার অদম্য প্রয়াসের কথা বলা হয়েছে।
Title
ব্যক্তি ও রাষ্ট্র : সমাজ-বিন্যাস ও সমাজ-দর্শনের আলোকে
অনুপম সেন একজন জ্ঞানতাপস, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বিরল ব্যক্তিত্ব। একাধারে তিনি সমাজবিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, অনুবাদক, শিক্ষাবিদ ও বরেণ্য বুদ্ধিজীবী। অনুপম সেনের জন্ম ১৯৪০ সালের ৫ই আগস্ট চট্টগ্রাম শহরে। তাঁর মাতা স্নেহলতা সেন ও পিতা বীরেন্দ্রলাল সেন। বীরেন্দ্রলাল সেন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে এমএ এবং রিপন কলেজ থেকে বিএল ডিগ্রি অর্জন করে ১৯২০ সালে চট্টগ্রাম কোর্টে ওকালতি শুরু করেন। তাঁর প্রমাতামহ ছিলেন বিশ্ববিশ্রুত পণ্ডিত ও তিব্বত-পরিব্রাজক শরচ্চন্দ্র দাশ। শরচ্চন্দ্র কর্তৃক তিব্বত থেকে উদ্ধারকৃত ও অনূদিত মহাকবি ক্ষেমেন্দ্রের 'বোধিসত্ত্ব অবদান কল্পলতা'-এর গল্প অবলম্বন করেই রবীন্দ্রনাথ রচনা করেন 'শ্যামা', 'পূজারিনী' প্রভৃতি অসাধারণ নৃত্যনাট্য ও কবিতা। তাঁর জ্যেষ্ঠতাত ছিলেন বাংলা সমালোচুল সাহিত্যের জনক কবিভাস্কর শশাঙ্কমোহন সেন। স্বাভাবিক যে, অনুপম সেন শৈশব থেকেই সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে গড়ে ওঠার সুযোগ পান। অনুপম সেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজতত্ত্ব বিষয়ে বিএ (অনার্স) এমএ এবং কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবন শেষে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ চার দশক ধরে শিক্ষকতা পেশায় ব্রতী ছিলেন। বর্তমানে তিনি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। সমাজতত্ত্বের ছাত্র হলেও তাঁর পড়াশোনা ও গবেষণার ক্ষেত্র বহুমাত্রিক। মানবসভ্যতার ইতিহাস, বাঙালি রেনেসাঁস, বাংলাভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও দেশচেতনা ইত্যাদি তাঁর জীবনকেন্দ্রিক অধ্যয়নের মূলগত বিষয়। তাঁর অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও কর্মসাধনা তাঁকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। শিক্ষা ও সমাজভাবনার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০১৪ সালে 'একুশে পদক'সহ অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অবদান রাখেন। বলা যায়, স্বাধীনতা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সকল অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রাজপথের সাহসী মানুষ তিনি। বিশ্ববিখ্যাত প্রকাশক Routledge তাঁর The State, Industrialization and Class Formations in India গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে। এছাড়াও তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ- 'বাংলাদেশ: ভাবাদর্শগত ভিত্তি ও মুক্তির স্বপ্ন'; 'কবি-সমালোচক শশাঙ্কমোহন সেন'; 'সাতটি বক্তৃতা: বাঙালি-মনন, বাঙালি সংস্কৃতি'; 'সুন্দরের বিচার সভাতে'; 'বিলসিত শব্দগুচ্ছ'; 'জীবনের পথে-প্রান্তরে'; 'বাংলাদেশ: রাষ্ট্র ও সমাজ, সামাজিক অর্থনীতির স্বরূপ'; 'বাংলাদেশ ও বাঙালি রেনেসাঁস, স্বাধীনতা-চিন্তা ও আত্মানুসন্ধান'; 'ব্যক্তি ও রাষ্ট্র: সমাজ-বিন্যাস ও সমাজ-দর্শনের আলোকে; 'আদি-অন্ত বাঙালি বাঙালি সত্তার ভূত-ভবিষ্যৎ'; ইতিহাসে অবিনশ্বর: 'অসাম্যের বিশ্বে সাম্যের স্বপ্ন' পাঠকসমাজে ব্যাপকভাবে আদৃত হয়েছে