ইসলামের স্বর্ণ যুগে সামাজিক ন্যায়-নীতি ইসলামের মূল প্রাণশক্তি ইসলামের স্বর্ণোজ্জল ইতিহাসের দিকে দৃকপাত করলে আমরা সেখানে তার মূল প্রাণশক্তিকে সদা সক্রিয় দেখতে পাই। সত্য দ্বীনকে যে ব্যক্তি জানবার চেষ্টা করবে এবং তার মেজাজ-প্রকৃতি ও ইতিহাসকে অধ্যয়ন করবে সে তার প্রাণশক্তিকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে। এই প্রাণশক্তিকে সে ইসলামের আইন-কানুন ও নীতিমালার মধ্যে পূর্ণোদ্যমে কার্যকর দেখতে পাবে। এটা এত প্রভাবশালী যে, যে কোনো মানুষই এর দ্বারা প্রভাবান্বিত না হয়ে পারে না। কিন্তু কোনো গভীর অনুভূতি ও মৌলিক চিন্তাধারা যেমন সীমাবদ্ধ ভাষায় বর্ণণা করা যায় না তেমনি এই প্রাণশক্তিরও বর্ণনা দেয়া অত্যন্ত দুঃসাধ্য ব্যাপার। এ প্রাণশক্তি আবেগ ও উদ্দীপনায়, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে এবং রসম-রেওয়াজের মধ্যে সক্রিয় থাকে বটে কিন্তু তাকে ভাষার সীমিত পোষাকে আবৃত করা অত্যন্ত কঠিন। এই প্রাণশক্তিই সেই সমুন্নত প্রোজ্জ্বল দিক চক্রবালের রূপরেখা নির্দেশ করে, যার অভিমুখে যাত্রা করার জন্য ইসলাম তার অনুসারীদেরকে প্রেরণা ও উৎসাহ যোগায়। ইসলাম তার অনুসারীদেরকে জীবনের সর্বোচ্চ লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য উদ্বুদ্ধ করে এবং সে জন্য শুধু অপরিহার্য্য্ কর্তব্য ও গতানুগতিক আনুষ্ঠানিকতা পালনে ক্ষান্ত না হয়ে, স্বেচ্ছায় সানন্দে আরো বেশি চেষ্টা সাধনা করার জন্য অনুপ্রাণিত করে। মহৎ লক্ষ্যে পৌঁছারপথ অত্যন্ত কঠিন ও দুর্গম আর সেখানে পৌঁছার পর তার ওপর অবিচল থাকা আরো বেশি দুঃসাধ্য। জৈবিক প্রেরণা ও চাহিদা এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের প্রবল চাপ অধিকাংশ মানুষের পায়ে জিঞ্জির হয়ে জীবনের মহত্তর লক্ষ্যে পৌঁছারপথে অন্তরায় হয়ে দাড়ায়। আর যদিও-বা আবেগ উদ্দীপনার তীব্রতায় এর সংকল্পের প্রাবল্যে কখনো সেখানে পৌঁছেই যায় তাহলেও তার সেখানকার বাধা-বিঘ্ন ও বিপদ-আপদ অতিক্রম করে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অবস্থান করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারণ এ মহোন্নত স্তরের সাথে জড়িত রয়েছে জান-মাল এবং চিন্তা ও কর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। তন্মধ্যে প্রতিটি ব্যক্তির ওপর নিজ সত্তা, নিজ সমাজ ও মানব জাতি সম্পর্কে এবং সর্বোপরি তার স্রষ্টার ব্যাপারে যে দায়িত্ব অর্পিত রয়েছে তা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুতর। তার স্রষ্টা যে তার প্রতিটি ছোট বড় কাজ সর্বদা স্বচক্ষে অবলোকন করছেন, তার মনের গভীরে লুকানো গোপন কথা ও তার নিঃ শব্দ কার্যক্রম সম্পর্কেও কার্যক্রম সম্পর্কেও ওয়াকিফহাল রয়েছেন- এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট অনুভূতি জাগরুক রাখাই হচ্ছে স্রষ্টার সম্পর্কে তার গুরু দায়িত্ব। এই গুরু দায়িত্ব উপলব্ধি করার জন্য ইসলাম তার বিবেককে করেছে সদা জাগ্রত এবং হুশিয়ার। আর তার চেতনা ও প্রজ্ঞাকে করেছে সুতীক্ষ্ণ ও সুতীব্র।