ময়মনসিংহের গীতিকাগুলো বাংলাদেশের অন্য সকল অঞ্চলের গীতিকার তুলনায় শিল্পধর্মে স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত। মধ্যযুগের ধর্মাচ্ছন্ন পরিবেশে এগুলোর উদ্ভব ঘটলেও যে জীবনতৃষ্ণা ব্যক্ত হয়েছে এসব গীতিকায় তা আধুনিকতাস্পর্শী। বিশেষ করে এর নারী-চরিত্রগুলো তাদের প্রণয়াবেগে, পতিনির্বাচনে এবং সতীত্বচিন্তায় যেরূপ স্বাধীনমনস্ক জীবন-অভীপ্সা ব্যক্ত করেছে তা মধ্যযুগের ঈশ্বরপ্রভাবিত সমাজকাঠামোয় অকল্পনীয়। এসব কিছু তাদের ব্যক্তিত্বের জাগরণকেও চিহ্নিত করেছে। অন্যদিকে এসব গীতিকা হয়ে উঠেছে মধ্যযুগীয় বাংলার সমাজপরিবেশেরও এক অনবদ্য দলিল। এতে অঙ্কিত হয়েছে বিভিন্ন শ্রেণী ও বৃত্তির বৈচিত্র্যমণ্ডিত মানুষের জীবনচিত্র। তাদের জীবনাচরণ ও জীবনোপকরণ থেকে ওই সমাজের স্বরূপ অনুধাবন করা যায়। শুধু উন্নত বিষয়ভাবনা নয়, এসব গীতিকার গঠনশৈলীও দক্ষ শিল্পকুশলতার স্বাক্ষর। অশিক্ষিতপটু পল্লিকবিগণ তাদের সহজাত সৃজনশীলতায় এমন সব গীতিকা সৃষ্টি করেছেন যা তাদের রুচিস্নিগ্ধ সৌন্দর্যপিপাসু মার্জিত মনের পরিচয়কেই বড় করে তুলে ধরে। অধিকাংশ গাথায় চরিত্রচিত্রণ, কাহিনীবিন্যাস ও রসনিষ্পত্তির ক্ষেত্রে যেরূপ শৈল্পিক দক্ষতার স্বাক্ষর এঁরা রেখেছেন তা অভাবনীয়। অলংকারমণ্ডিত কাব্যসৌন্দর্য সৃষ্টির ক্ষেত্রেও রয়েছে। রচয়িতাগণের সতর্ক—সূক্ষ্ম মনোযোগ। নর-নারীর ইহজাগতিক স্বপ্ন-আকাঙক্ষা-আবেগকে প্রকৃতিসংলগ্ন করে উপস্থাপনের মধ্যেও আধুনিক মনোভঙ্গির পরিচয় মেলে। লেখক সমকালসতর্ক দৃষ্টিকোণ থেকে ময়মনসিংহের গীতিকাসমূহ মূল্যায়নে সচেষ্ট হওয়ায় উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো উন্মোচিত ও আলোকপ্রাপ্ত হয়েছে। এ কারণে পাঠকেরা এ গ্রন্থে লোকসাহিত্য-বিশ্লেষণের একটি নতুন মাত্রাও অনুধাবন করবেন।
জন্ম ১৯৫৯ সালের ৩০ এপ্রিল, বর্তমান পিরোজপুর জেলার সেহাঙ্গল গ্রামে। তিনি পাঠ গ্রহণ করেছেন সেহাঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়, ব্রজমোহন মহাবিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। লাভ করেছেন এম.ফিল. ও পিএইচ.ডি. ডিগ্রি। শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউটে, বর্তমানে বাংলা বিভাগে।