মানুষের সুকুমারবৃত্তির লালন ও কর্ষণের জন্য প্রয়োজন আছে ইতিহাস সচেতনতার। কারণ অতীত ও সমসাময়িক মনুষ্য জীবনধারা ও কার্যক্রমকে কেন্দ্রকরে বিনির্মিত হয় ইতিহাস। যে জাতির ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই সে জাতির ভবিষ্যৎকর্মপন্থার দিকনির্দেশনা তমসাবৃত। একটি ইতিহাস সচেতন জাতি বিশ্বে এমন স্থান করে নিতেসক্ষম যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অনুসরণীয় হয়ে থাকে। তাই জাতির স্বার্থে ইতিহাসেরপঠন-পাঠন ও অনুশীলনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কিন্তু আখ্যান-উপাখ্যান, জনশ্রুতিও কিংবদন্তি ইতিহাসের পরিমণ্ডলে অনুপ্রবেশ করে প্রকৃত তথ্য অবগত হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টিকরে। ঐতিহাসিক সকল তত্ত্ব ও তথ্যের নিরীক্ষণ ও পর্যালোচনার জন্য প্রয়োজন পড়ে ইতিহাসচর্চার(Historiography)। ইতিহাসের নির্মোহতা নিশ্চিত করতে এবং তা থেকে সত্য অনুসন্ধানে ব্রতীহতে ইতিহাসচর্চার কোনো বিকল্প নেই। মুসলমানদের ইতিহাস যেমন ঐশ্বর্যমণ্ডিত তেমনি তার পর্যালোচনার পদ্ধতি যৌক্তিক ও বিজ্ঞানমনস্ক। এই উপলব্ধি থেকে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর শ্রেণীর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে মুসলমানদের ইতিহাসচর্চা একটি আবশ্যিক পত্র হিসেবে পাঠ্যসূচিভুক্ত। এই বিষয়ের প্রতি লক্ষ রেখে খিলাফত সময়ক্রম ও ভারত উপমহাদেশে মুসলমানদের ইতিহাসচর্চার ওপর ছাত্র-ছাত্রী এবং সাধারণবোদ্ধা পাঠকদের অনুধাবনযোগ্য করে এই গ্রন্থ রচনার প্রয়াস।
বিশিষ্ট গবেষক ও শিক্ষক ড. এ কে এম ইয়াকুব আলী ১৯৩৯ সালের ১ আগষ্ট বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম থানার হাটধুমা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৬২ সালে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে এম এ পাস করে একই বিভাগে ১৯৬৩ সালে একজন নবীন শিক্ষক হিসেবে যােগদান করেন। বিমক ফেলােশিপ নিয়ে তিনি ১৯৮২ সালে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতে পিএইচ. ডি. লাভ করেন। তিনি সুদীর্ঘ চার দশকের অধিককাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে ২০০৪ সালের ৩১ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রফেসর হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি একজন প্রাচ্যভাষাবিদ, মুসলিম মুদ্রা ও প্রস্তরলিপি বিশারদ এবং সর্বোপরি একজন সফল গবেষক। তার নিরলস গবেষণা ও পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে প্রফেসর ইমেরিটাস পদে নিয়ােগ দান করে এবং তিনি ২০০৫ সালের আগস্ট হতে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে উক্ত পদে কর্মরত আছেন।