বিজ্ঞানের জগতে হাজারো তত্ত্ব-অনুকল্পের মধ্যে গুটিকয়েক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব মাত্র আমাদের জীবন-জগৎ-দর্শনকে তীব্র ঝাঁকুনি দিতে পেরেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল চার্লস ডারউইন এবং আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেসের ব্যাখ্যাত ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’। ‘প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে জীবের বিবর্তন’ নিছক কোনো তত্ত্ব নয়, গত দেড়শ বছর ধরে হাজারো পরীক্ষা-নিরীক্ষা-গবেষণা-বিশ্লেষণে ঋদ্ধ এ তত্ত্বটি জীববিজ্ঞানের গণ্ডি পেরিয়ে আমাদের চিরায়ত দৃষ্টিভঙ্গি, দর্শন, জীবনাচরণকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। দীর্ঘদিনের লালিত অপবিশ্বাস, কুসংস্কার আর প্রথাবদ্ধ সমাজচেতনার মূলে কুঠারাঘাত করে, আমাদের মননে ইহজাগতিক বিশ্ববোধ সৃষ্টিতে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে। পৃথিবী জীবনের বিকাশ, জীববৈচিত্র্য, প্রজাতির উদ্ভব, বিলুপ্তি, বংশরক্ষা, পরিবেশ-প্রতিবেশের সাথে জীবের অভিযোন, প্রজাতির পরিবর্তনশীলতা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ জীববৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো জানা এবং বোঝার জন্য প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বের কোনো বিকল্প নেই। বিশ্বখ্যাত বংশগতিবিদ থিওডোসিয়াস ডবঝান্সি’র বিখ্যাত উক্তি : ‘জৈববিবর্তনের বোধ ব্যতীত জীববিজ্ঞানে কোনো কিছু অর্থবোধক নয়।’ ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ চার্লস ডারউইনের জন্মদ্বিশতবার্ষিকী এবং একই বছরের ২৪ নভেম্বর তাঁর রচিত তুমুল জনপ্রিয় বিজ্ঞান-সাহিত্য ‘অরিজিন অব স্পিসিজ’ গ্রন্থের দেড়শ বছরপূর্তি ঘটা করে উদ্যাপিত হল সারা বিশ্বে। ২০০৯ সাল আন্তর্জাতিকভাবে ‘ডারউইন বর্ষ’ হিসেবে পালিত হয়। উল্লেখ্য, দেড় দশক আগে থেকেই প্রতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি ‘ডারউইন দিবস’ পালন করে আসছে বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানভিত্তিক সংগঠনগুলো। ২০০৯ সালে বিশ্বজুড়ে ডারউইন বর্ষ উদ্যাপনের জন্য বিজ্ঞান সংগঠনগুলো বছর মেয়াদি কর্মসূচি ঘোষণা করে।