১৯৮৭ সাল হইতেই বাংলাদেশে বাংলা ভাষায় আইন প্রণয়ন করা হইতেছে। ইহার ধারাবাহিকতায় আদালত অবমাননা আইন, ২০১৩ বাংলা ভাষায় প্রণয়ন করা হইয়াছে। বাংলা ভাষা আমাদের রাষ্ট্রভাষা। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী এই দেশের সূর্য সন্তানদের রক্ত দিতে হইয়াছে। বহু রক্তের ও ত্যাগের বিনিময়ে বাংলা রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হইলেও বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ৪২ বৎসরেও উচ্চ আদালতে যৎসামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলায় রায় লেখা শুরু হয় নাই। দেশে সামগ্রিকভাবে ঐক্যমত লক্ষ করা যায় যে, সুপ্রীম কোর্টের সকল রায় ও কার্য বাংলা ভাষায় সম্পাদন করা আব্যশক। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি জনাব মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সুস্পষ্ট অভিমত দিয়াছেন যে, সুপ্রীম কোর্টের রায় বাংলায় না লেখার কোন কারণ নাই। কিছু দিন আগে ২০১৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী ভাষা শহীদ দিবসে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি জনাব মোঃ মোজাম্মেল হোসেন সুপ্রীম কোর্টে বাংলায় রায় লেখার বিষয়ে অতীব ইতিবাচক অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন। এইরূপ জনমতের প্রতি সহমত পোষণ করিয়া এবং আদালত অবমাননা আইনটি বাংলায় প্রণীত হইয়াছে বলিয়া এই বইটির ব্যাখ্যা ও বিভিন্ন মামলার নজীরে বর্ণিত নীতিসমূহ বঙ্গানুবাদ করিয়া লিখিত হইয়াছে যাহাতে সাধারণ পাঠকসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই উপকৃত হইতে পারেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ১৯২৬ সালের আইনের অস্পষ্টতা দূরীকরণের জন্য সংজ্ঞাসহ যে সকল বিষয় সংযোজন করা হইয়াছে, সেই সকল বিষয় পূর্ববর্তী আইনের আওতায় দায়েরকৃত বিভিন্ন মামলায় উচ্চ আদালত ব্যাখ্যা করিয়া বহু পূর্বেই অনেক সিদ্ধান্ত দিয়াছেন। কাজেই ঐ সকল সিদ্ধান্ত বর্তমান আইনেও নজীর হিসাবে প্রযোজ্য। বর্তমান বইয়ে এই বিষয়ে স্বাভাবিকভাবেই যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হইয়াছে।
লেখক চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের দশরশিয়া গ্রামে ১৯৫৩ সনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮১ সনে বিসিএস (বিচার) ক্যাডারের মুনসেফ পদে চাকরি জীবন শুরু করেন। তিনি খুলনায় ডিভিশনাল স্পেশাল জজ, মাগুরায় জেলা ও দায়রা জজ, ঢাকায় ডিভিশনাল স্পেশাল জজ, ফরিদপুরে জেলা ও দায়রা জজ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে যুগ্ম সচিব (আইন) এবং ঢাকায় মহানগর দায়রা জজ পদে কর্মরত ছিলেন। পরিশেষে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে ২ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বপ্রকার ফৌজদারি মামলার বিচার কাজে তিনি ২২ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। আইনজীবী হিসেবে প্রায় ৪ বছর ও বিচারক পদে ৩০ বছর কাজ করেছেন। ১৬ বছরের অধিককাল লেখক হিসেবে কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি আরবিট্রেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।