মাক্সিম্ গোর্কিও নাম রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লবের সঙ্গে, অন্তত আমাদেও দেশে, জড়িত। ‘মা’ লেখা হয়েছিল বিপ্লবের আগে। কিন্তু মাক্সিম্ যে কেন তেতো, কটুস্বাদ, তার কারণ ঐ উপন্যাসে খুঁজে পাওয়া যাবে না।। আলেক্সিয়েই মাক্সিমভিচ্ পেশকভ্ কেন নিজের জন্য ‘গোর্কি’ তখল্লুস বেছে নিলেন তা জানা যায় অনেক পরে লেখা আত্মজৈবনিক তিনটি বই পড়ে। বাঙালি পাঠক ঐ ত্রিপিটক উপন্যাসও সাগ্রহে পড়ে আসছেন সম্ভবত অর্ধশতাব্দী কালের কম নয়। সত্যি বলতে, ‘আমার ছেলেবেলা’-‘পৃথিবীর পথে’-‘পৃথিবীর পাঠশালায়’ জনপ্রিয়তায় পাল্লা দেয় ‘মা’ উপন্যাসেরই সঙ্গে। দুই মলাটের ভিতরে একত্রে এই তিনটি গোর্কি-রচনা ভরে দেওয়ার উদ্দেশ্য পাঠকের মনে গেঁথে দেওয়া যে, গ্রন্থত্রয় একটি কাহিনীরই সম্প্রসারণ। ট্রিলজির বাংলা ‘ত্রিপিটক’ শব্দ আমাদের দিয়ে গেছেন কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত। সম্পাদনার দায়িত্ব কত গুরুভার হতে পারে তা যেমন বোঝা যাবে ত্রিপিটকের এ-বঙ্গানুবাদ খুললেই, তেমনি পাঠকের জন্য কী পরিমাণ জরুরি ছিল সম্পাদক হায়াৎ মামুদের বৈদগ্ধ্য, কাণ্ডজ্ঞান, কর্তব্যনিষ্ঠা ও পরিশ্রম তাও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। তাঁর টীকা-টিপ্পনীর কারণেই গোর্কিও ত্রিপিটকটি একইসঙ্গে রুশ সংস্কৃতিরও খণ্ডদলিল হয়ে রইল। রুশ সাহিত্যসংস্কৃতি-জগতের ও বিশ্বসাহিত্যেও দিক্পাল স্রষ্টাদের অর্ধশতাধিক ছবি এ গ্রন্থেও বিশেষ গৌরব। বাংলা ভাষায় রুশ সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা এবং কখনো-কখনো মূল রুশ থেকে অনুবাদের জন্য হায়াৎ মামুদ উভয় বাংলায় স্বনামধন্য। অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পুশ্কিন্ পুরস্কারের ভূষিত হয়েছেন।
হায়াৎ মামুদের জন্ম ব্রিটিশ ভারতে, পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার মৌড়া নামে আখ্যাত এক গ্রামে, ১৩৪৬ বঙ্গাব্দের ১৭ আষাঢ় (২রা জুলাই ১৯৩৯) তারিখে । ১৯৫০ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অভিঘাতে মানসিকভাবে বিপর্যন্ত পিতার হাত ধরে চলে আসতে হয় ঢাকা শহরে । অদ্যাবধি সেখানেই বসবাস । স্কুল-কলেজ -বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপ্ত করেছেন এ শহরেই। পিএইচ. ডি. ডিগ্রি তুলনামূলক সাহিত্যে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, প্ৰায় প্রৌঢ় বয়সে। রুশ ভাষা অল্পবিস্তর জানেন, অনুবাদের চাকরি করেছেন প্ৰগতি প্ৰকাশনে, মস্কোয়-সুদূর ও স্বপ্রিল সোভিয়েত ইউনিয়নে বসে । দেশের অভ্যন্তরে চাকরি সর্বদাই শিক্ষকতার-প্ৰথমে কলেজে পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে । বর্তমানে অবসর-জীবন যাপন করছেন। বাংলা একাডেমী পুরস্কার পেয়েছেন শিশুসাহিত্যে । দেশ-বিদেশের সারস্বত সমাজের সঙ্গে যোগাযোগ আছে । সমালোচনা, ছাত্রপাঠ্য বই ইত্যাদি মিলিয়ে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ষাটেরও বেশি।