খরগোশের দারুন বুদ্ধি ঘন বনের পাশ দিয়ে কলকলিয়ে রুপোলি ঝিলিক তুলে বয়ে গেছে ওকাভাঙ্গো নদী। নদীর তীর জুড়ে সারি দিয়ে রয়েছে নানা ধরনের ঝাকড়-মাকড় গাছ। সেসব গাছে অনেক পাখি এসে বসত। সেই নদীটির এক নির্জন খাঁড়িতে বাস করত এক কুমির। ফাঁড়ির এদিক-সেদিকে ভেসে যেত। অল্প কিছুটা জায়গা জুড়েই কুমিরটা ঘোরাঘুরি করত। নদী তীরের ঝোপঝাড়ে আলো-ছায়ার মায়াবি পরিবেশ। কুমিরটি অনেক সময় সেখানে গিয়ে বিশ্রাম নেবার জন্য চিৎ হয়ে শুয়ে থাকত। জলপিপিরা তিরতির করে কুমিরের পাশ দিয়ে পদ্মপাতার ওপর দিয়ে হেঁটে যেত। কুমিরটা ভুঁশ করে ডুব দিয়ে চলে যায় পানির নিচে। ওকাভাঙ্গো নদীটা থেকে বেশ কিছুটা দূরে ছিল এক বিশাল ঘাসবন। বাতাসে সেই ঘাসবনটা ছমছম করে দুলত। সেই ঘাসবনে আরো অনেক প্রাণিদের সাথে একপাল জেব্রাও থাকত। ডোরাকাটা দাগ শরীরের প্রাণিরা ঘাসবনে ছুটোছুটি করে। তারা ঘাসবনের এদিকে-সেদিকে মনের সুখে চলাফেরা করে। তাদের ভাব দেখে মনে হয় কোথাও বুঝি তাদের হারিয়ে যেতে মানা নেই। একদিন একটা জেব্রা অন্যদের খবর দিলো, তোমরা কি জানো দূরের নদীর পানিটা খেতে খুব ভালো। টলটলে শীতল পানি। খেলেই বুকটা একেবারে জুড়িয়ে যাবে। এ কথা শুনে বাকি জেব্রারা বলে উঠল, তাই নাকি? এমন পানিই তো আমরা খেতে চাই। নদী চেনা সেই জেব্রাটি খুশি মনে বলে, চলো, আমরা তাহলে একদিন সেখানে দলবেঁধে পানি খেতে যাই। একদিন ঘাসবন থেকে জেব্রারা দলবেঁধে অনেকটা পথ পেরিয়ে এলো ওকাভাঙ্গো নদীর তীরে। নদীর বুক থেকে ভেসে আসা কলোকলো বাতাসে তাদের শরীর একেবারে জুড়িয়ে গেল। এতোটা পথ পেরুনোর ক্লান্তি তখন দূর হয়ে যায়। তারপর সবাই তীরে দাঁড়িয়ে মুখ নামিয়ে নদী থেকে চোঁ চোঁ করে পানি খেতে থাকে। একেবারে সত্যি কথাই বলেছিল জেব্রাটি। নদীর টলটলে পানিটা বেশ মিষ্টি আর শীতল। এদিকে জেব্রারা যখন পানি খাচ্ছিল তখন খাঁড়ির কুমিরটা এক কোণা থেকে জুলজুল করে তা দেখছিল। ডোরাকাটা দাগের জেব্রাদের শরীরে রোদ পড়ে ঝলকাচ্ছে। কুমিরের কাছে তখন জেব্রা দলটিকে চমৎকার বলে মনে হলো। কুমিরটা ভাবতে থাকে, এই জেব্রাদের মনে না জানি কতো আনন্দ। তারা বিশাল এক ঘাসবনে বাস করে। সেখানে সবসময় ছুটোছুটি করে। এদিকে-সেদিকে দাপিয়ে বেড়ায়। ইচ্ছে করলেই অনেক দূর পর্যন্ত চলে যেতে পারে। তাদের কোনো বাধা নেই। এটা মনে করে পাশাপাশি নিজের কথা ভেবে কুমিরের খুব দুঃখ হলো। তার মনটা ভরে গেল বিষাদে। তার যে দূরে কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। সে কতোদিন ধরে পড়ে আছে এই নদীর খাঁড়ির এক কোণায়। খাঁড়ির মাঝে তো আর কলোকলো করে নদীর ¯্রােত বয়ে যায় না। কেমন থমকে থাকা এক পরিবেশ। সে যেন ওখানে আটকে রয়েছে। সেখানে সবকিছুকে তার কাছে ভীষণ একঘেঁয়ে বলে মনে হতে লাগল। কুমিরের মনটা গেল কুঁকড়ে। সে চাইছে তার এই অবস্থাটার অবসান হোক। জীবনে হঠাৎ করে একটা পরিবর্তন ঘটুক। নতুন এক জীবনের দোলা চলে আসুক। এসব ভেবে কুমিরটা এগিয়ে যায় তীরের কাছে পানি খেতে আসা জেব্রাদের কাছে। জেব্রাগুলো যেন তার কাছে এবার নতুন এক বার্তা নিয়ে এসেছে। কুমিরের ইচ্ছে করেছে জেব্রাদের সাথে তাদের ঘাসবনে চলে যেতে। কুমিরটি ভুঁশ করে পানির নিচ থেকে মাথা তোলে। জলপিপিরা তিরতিরিয়ে ছুটে যায়। জেব্রাগুলো দেখল ধীরে ধীরে মাথা তুলছে কুমির। কুমিরটি খুব আগ্রহের সাথে বলে ওঠে, এইযে জেব্রা ভাইয়েরা, আমি কি তোমাদের সাথে ঘাসবনে গিয়ে থাকতে পারি? আমার যে খুব ইচ্ছে। তোমরা কি এ ব্যাপারে হঠাৎ করে সাহায্য করবে? কুমিরটি জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে রয়েছে জেব্রাদের দিকে।
(জন্ম: ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর) আলী ইমামের জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। জন্মের ৬ মাস পরই পুরো পরিবারসহ ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। পুরো পরিবারসহ থাকতেন পুরান ঢাকার ঠাটারীবাজারে।বাংলাদেশী শিশু সাহিত্যিক এবং অডিও ভিজ্যুয়াল ব্যবস্থাপক। আলী ইমাম বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহা-ব্যবস্থাপক ছিলেন এবং ২০০৬ সালে চাকুরী থেকে অবসরগ্রহণ করেন। গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ফিচার, ভ্রমণকাহিনী, বিজ্ঞান কল্পকাহিনী সবই তিনি লিখেছেন বাচ্চাদের জন্য