টুকরো টুকরো কথা, ছেঁড়া ছেঁড়া ছবি, সামান্য ঘটনার মধ্য দিয়ে অসামান্যের ইঙ্গিত, এমনিভাবে যুদ্ধদিন ও যুদ্ধ-পরবর্তী আনন্দ-বেদনা হতাশা-ক্ষোভের কাহিনী সাজিয়েছেন কাজী জাকির হাসান। তিনি বলেছেন প্রান্তজনের কথা, সাধারণ সেইসব মানুষ যাঁরা অলীক মন্ত্রস্পর্শে সমষ্টির বীর হয়ে উঠেছিলেন, নির্দ্বিধায় উৎসর্গ করেছিলেন তাদের জীবন-যৌবন, পরোয়া করেন নি ধন কিংবা মানের। স্বাধীন দেশে ভিন্নতর জীবনধারা গ্রাস করেছিল সেই বাস্তব, দ্রুতই পাল্টে গেল জীবনের ছবি, স্বপ্নভরা মানুষগুলো ক্রমে ক্রমে হয়ে পড়ল বিস্মৃত মানুষ, জৌলুষ ও চাকচিক্যময় সমাজে যারা অপাঙ্ক্তেয় এবং অভাজন। যুদ্ধের ক্ষতচিহ্ন ধারণ করে চলা বীর এক মুক্তিযোদ্ধা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ মিলিয়ে সেইসব মানুষদের গল্প মেলে ধরেছেন সকলের সামনে। বাঙালির জাতীয় জাগরণের মহত্তম পর্ব দেশবাসীর মনে যে সমবায়ী স্বপ্ন জাগিয়েছিল সেই অমোঘ টানে জাগতিক সকল বন্ধন ছিন্ন করে মানুষ হয়ে উঠেছিল আকাশস্পর্শী। সেই জাগরণকে আমরা আবার জাগতিক লোভ-হিংসা-স্বার্থপরতা ও আত্মসিদ্ধির শৃংখলে বেঁধে ফেলেছি। একদা পরাভব না-মানা এইসব মানুষদের আমরা শনাক্ত করতে ব্যর্থ হই সম্প্রতির জনজীবনে, আলোকিত মুখগুলো নিষ্প্রভ হতে হতে হারিয়ে গেছে আঁধারে। কিন্তু সব কথা হয়ে যাওয়ার পরও জেগে থাকে কিছু কথা, পরাজয়ের নিবিড় অন্ধকারে তলিয়ে গেলেও স্বপ্নে হানা দেয় চকিত কোনো আলোকরেখা। সেইসব মানুষদের কথা, তাহাদের গল্প, তাই কেবল জয়ের গাথা নয়, পরাজয়ের বিবরণী নয়, জয়-পরাজয় ছাপিয়ে ওঠা মানবজীবনসাধনার পরিচয় আমরা পাবো এইসব কাহিনীতে।