ফ্ল্যাপে লেখা কথা লুৎফর রহমান রিটন যে বাংলাদেশের অবিসম্বাদিত ছড়াকার সেকথা আজ আর গাঙ্গেয় বদ্বীপবাসী কাউকে নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। ছড়ার দামকে বিষম চড়ার দিকে নিয়ে গেছেন রিটন। মণিমু্ক্তোর চেয়েও। মাত্র ৩৭ বছর বয়সী রিটনের সব মিলে বইয়ের সংখ্যা ৪১টি। তার মধ্যে ২৬টিতেই ছড়ার ছড়াছড়ি। সেগুলোকে নিয়ে কাড়াকাড়ি হলে নিশ্চয় বাড়াবাড়ি হবে না। বিস্ফোরক বারুদঠাসা তুবড়ি থেকে বহুবর্ণের আতস, তারা, মরিচ কি নেই। বাংলা ভাষায় সম্ভবত এই প্রথম ছড়াসমস্ত’র মতো অভিযানের নেতৃত্বে রিটনকেই শোভা পায়। ছড়া আর রিটন প্রায় সমার্থবোধক শব্দ এখন বাংলাশে। ছড়া লিখেও যে তারকাখ্যাতি অর্জন করা যায় রিটন তার একমাত্র দৃষ্টান্ত। হেন বিষয় নেই যা তার ছড়ার খপ্পরে পড়ে নি। দেয়াল লিখন হিশেবেও উঠে এসেছে রিটনের ছড়ার পঙক্তি। শিশুদের মনোজগতের অন্ধিসন্ধি তার মুঠোবন্দি। সামরিক শাসন এবং স্বৈরাচার (আদি ও নব্য) বিরোধী গণআন্দোলনে রিটনের ছড়া আগুনের ফুলকির মতোই ঝলসে উঠেছে। গণমানুষেল দাবিকে ছড়ার ছন্দে গেঁথে প্রতিবাদী জনস্রোতকে মন্ত্রমুগ্ধ করার জাদুকরী ক্ষমতা রিটনকে নেতৃত্বের আসরে বসিয়েছে। রিটনের উদ্দেশে ছন্দেশ্বর অন্নদাশঙ্কর রায়ের প্রীতি বর্ষিত হয়েছে এভাবে- ‘রিটন তু নে কামাল কিয়া ভাই/ছড়ায় তোমার জুড়ি তো আর নাই’। নটবর আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ধীরোদাত্ত উচ্চারণে- লুৎফর রহমান রিটন সাতচল্লিশোত্তর বাংলাদেশের শিশুকবিতার ধারার সবচেয়ে সফল কবি এবং বাংলাভাষার শিশুসাহিত্যের উল্লেখযোগ্য কবিদের একজন। মস্ত কবি নির্মলেন্দু গুণের জবরদস্ত গদ্য নির্জরে- ‘ছড়াসম্রাট লুৎফর রহমান রিটন’। ছড়াপ্রেমী পাঠকমাত্রই একমত হবেন যে এই উচ্চারণে রিটন যথার্থ টেকসই।
সদা হাস্যময় সুদর্শন লুৎফর রহমান রিটনের খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা শুদু আমাদের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে অসীম পর্যন্ত তার বিস্তার। ‘ছড়াসমস্ত’ই রিটনের মস্ত বড় কাজ, অন্তত আজ এই মুহুর্ত অবধি। আস্ত একখানা আকাশ যেন।
Lutfur Rahman Reton পুরনো ঢাকার ওয়ারী এলাকায় তার শৈশব অতিবাহিত হয়। ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে এইচএসসি পরীক্ষা দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে আবুজর গিফারি কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করেন। তিনি ২০০১ খ্রিস্টাব্দে জাপানে বাংলাদেশের কালচারাল এটাশে নিযুক্ত হয়েছিলেন। সাবেক সম্পাদক হিসেবে ছোটদের কাগজ (অধুনালুপ্ত); জাপানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সাবেক ফার্স্ট সেক্রেটারি (২০০০-২০০১) ছিলেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থ: ছড়া: ধুত্তুরি (১৯৮২); ঢাকা আমার ঢাকা (১৯৮৪); উপস্থিত সুধীবৃন্ধ (১৯৮৪); হিজিবিজি (১৯৮৭); তোমার জন্য (১৯৮৯); ছড়া ও ছবিতে মুক্তিযুদ্ধ (১৯৮৯); রাজাকারের ছড়া (১৯৯৯); শেয়ালের পাঠশালা (১৯৯২); রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মারকগ্রন্থ (২০০০); নেপথ্য কাহিনী (২০০১)। সম্মাননা ও স্বীকৃতি সিকান্দার আবু জাফর সাহিত্য পুরস্কার ১৯৮২, অগ্রণী ব্যাংক শিশু ,সাহিত্য পুরস্কার ১৯৮২, ১৯৯৬, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুরস্কার ১৯৮৪, বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার ২০০৭