'স্মৃতি' তো তাকেই বলে, মনের মধ্যে বিশেষ বিবিদ্ধ ভাব যখন কোনো ঘটনাপরম্পরার ভেতর দিয়ে, বিভিন্ন সংঘাত আর সংঘর্ষের বিক্রিয়ায় মনেরই মধ্যে ধীরে ধীরে ভেসে ওঠে, যাকে আবার স্মরণে আসাও বলা যেতে পারে। বর্তমান বাংলা সাহিত্যের অন্যতম বরিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব, আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধার্হ, প্রণম্য শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়দা আমাকে মাঝে মাঝে বলেন, বিভিন্ন সময়ে 'প্রলয়, আপনার তো অত্যন্ত জাগ্রত স্মৃতি। আচ্ছা প্রলয়, স্মৃতিতে তো অনেক দুঃসহ যন্ত্রণা আর ব্যথাও থাকে। সেসব স্মৃতি জাগ্রত আর সচেতন থাকা কতটা ভালো? আপনার সচেতন সজাগ আর সতর্ক স্মৃতিতে তো আপনার জীবনের সেসব দুঃখময় মুহূর্তও সঞ্চিত আছে। সেসব স্মৃতিকে আপনি কেমন করে নিয়ন্ত্রণ করে এমন স্বাভাবিক আর সাবলীল থাকতে পারেন?' শীর্ষেন্দুদা আমাকে মাঝে মাঝে এসব জিজ্ঞেস করেছেন। তিনি ঠাকুরের অনেক অনুষ্ঠানে আমার অনেক কথা শুনেছেন। আমাকে তিনি প্রায় বলা যায় সব সময়েই সাক্ষাতে বা চলভাসে বলেন, ঠাকুর নিয়ে আপনার যে এত স্মৃতি, যা আপনি অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন, সেসব একদিন কিন্তু কালের স্রোতে হারিয়ে যাবে। কেউই আর মনে রাখবে না। আপনি আপনার এসব স্মৃতি এক জায়গায় লিখে রেখে দিন, যা স্থায়ী কাজ হয়ে থাকবে। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, এসব লেখা কি কোনো দিন কেউ পড়বে? তিনি আমার জিজ্ঞেসর জবাবে বলেছিলেন, 'প্রলয়, আমার জীবনে অত্যন্ত সামান্য সময় আমি ঠাকুরকে জাগতিকভাবে পেয়েছি। তাও আবার অনেক দূর থেকেই। আপনার মতো এত কাছে, তেমন নৈকট্য আমার হয় নি। আপনি অনেক কিছু দেখেছেন। আমরা ঠাকুরের প্রকাশিত যে ছবি আর আলোচনা পাই, তা তো আর পূর্ণাঙ্গ নয়। আমি তো ঠাকুরের অনেক পার্ষদ পরিকরকে অনুরোধ করেছি, আপনারা আপনাদের জীবনে যেমন যা প্রত্যক্ষ করেছেন, সেসব লিখে যান। বহু মানুষের জীবনের বহু আঙ্গিকে ধরা ঠাকুরের অনেক আলোচনা আর তাদের স্মৃতি থেকে আমার এবং ভবিষ্যকালের মানুষ একজন পূর্ণাঙ্গ ঠাকুরকে পাবেন।'