ফ্ল্যাপে লিখা কথা টেম্পাল অব লিটারেচার বলে নবম শতাব্দীর বিদ্যাপীঠে যুগলে বিকাল কাটিয়ে অতঃপর একাকী হাঁটতে হাঁটতে চলে আসা পদ্ম পুকুরের জলের উপর দাঁড় করানো সনাতনী এক মন্দিরে। শিরোপীড়ায় দগ্ধ হয়ে অবশেষে ফরাসি কুঠিবাড়িতে উপশমের সন্ধান; যার দুয়ারে এস দাঁড়ায় সিল্কের লণ্ঠন হাতে ফিরোজা বর্ণের আওডাই পড়া বোবা যুবতী।
হোয়াঙ লিয়েন সান পর্বতের মঙপল্লীতে রাত্রিবেলা ঘরের ভেতরে থেকে ভেসে আসে ‘হাহ হা রানই রানই’ বলে রহস্যময় ধ্বনি। দালাতের ক্রেইজি হাউসের ঘরটি আকৃতিতে বটগাছের মতো। লাট সাহেবের সামার প্যালেসে মাটির নিচের কক্ষে পুরোনো সব পেইনটিং, আদ্যিকালের গ্রামোফোন, ট্যাক্সিডার্মি করা চিতাবাঘ, ভাল্লুক ও মায় হরিণের মূর্তি। আবার কোনো এক ভোরবেলা যাত্রা শুরু হয় কর্দমাক্ত নদীর পাড় থেকে-যেখানে তরুণী মাঝিরা গঞ্জের দিকে ভেসে যাচ্ছে পশরা নিয়ে।
সাক্ষাৎ হয় শেষবারের মতো মি. নংপাওয়ের সাথে। তিনি তাঁর জন্য তৈরি সুগন্ধি কাঠের কফিনের ডালা খুলতে খুলতে কবরের জায়গা না দেখাতে পারার জন্য আফসোস করেন। তারপর তিমি পূজার বিচিত্র মন্দিরে কিছু সময় কাটিয়ে ট্রলার চলে জলে ভাসা-যে জলে একদিন মার্কিন সিপ্লেন থেকে ছোড়া গোলায় ডুবে গিয়েছিল বেশ কটি জেলে নৌকা, আর স্রোতে ভাসছিল তাদের ঘটিবাটি, মাদুর-বালিশ, আয়না-কাঁকই; এবং একটি দোলনা-যাতে ঝুমঝুমি নিয়ে খেলছিল দুটি যমজ শিশুকন্যা। হোয়ে নগরীর সিটিডেলে সনাতনী ধাঁচের স্থাপত্যমালার সাথে বেমানান ফরাসি ভিলায় ঢুকে শিংগাল হরিণের মস্তকের নিচে দাঁড়ানো। বহু যুগ আগে এখানে ভিয়েতনামের শেষ সম্রাট বাওডাই দাবা খেলতেন সম্রাজ্ঞীর সাথে। তিমি মাছের আকৃতিতে গড়া সম্রাটের সমাধি মন্দির। এ গৃহে বসে সম্রাট তুলি দিয়ে আঁকতেন কবিতার ক্যালিওগ্রাফ, পর্যবেক্ষণ করতেন আসমানি মানচিত্রে গ্রহ-নক্ষত্রের গতিপথ। হোয়ে নগরীর আরেকটি মন্দিরে সংরক্ষিত এন্টি অস্টিন গাড়ি। এ গাড়িতে চড়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুক সায়গন শহরে এসে পদ্মাসনে বসে তাঁর শরীরে দাহ্য তরল ছিটিয়ে অগ্নিতে আত্নাহুতি দেন।
এবং তলোয়ার হ্রদের উইপিং উইলো গাছের নিচে অনেক বছর পর আবার দেখা হয় ডুয়ান তানের সাথে। এক মার্কিন জঙ্গি বিমানের ডানার নিচে বসে শোনা তার গ্রন্থ লেখার কাহিনী। অতঃপর তার সাথে ভেসে বেড়ানো হালঙ-বে’র লাইমস্টোনে গড়া হাজার বিজার জনহীন দ্বীপমালার ভেতর দিয়ে টংকিং সাগরের নোনা দরিয়ায়।
সূচিপত্র * সাহিত্য মন্দির * জলপুতুলের নৃত্যকলা * পদ্মপুকুরে ভাসে মন্দিরখানি * ফরাসি কুঠিবাড়ির কথা * কিনচিয়েং পরব * শহর চন্দ্রমল্লিকা * লাল গ্রামের গল্প * লাট ভবনে বিনিদ্র রাত * সায়গন নদীতে বাংলার জাহাজ * হোচিমিন সিটিতে সওদাপাতি * সায়গনের রাষ্ট্রপতি ভবনে * জেড ড্রাগন সম্রাটের প্যাগোডা * মি. নংপাওয়ের সাথে শেষ সাক্ষাৎ * সংসার ভাসে জলে * দুর্গের সিংহদুয়ার * ভিয়েতনাম যুদ্ধের চিহ্ন * জলবেদে * মুনকেক * সম্রাটের সিটিডেল * হেডলাইন * সম্রাটের সমাধি * রাজকুমারীর মমি * সরোবরে সংরক্ষিত তরবারি * হালঙ-বে
জন্ম ১৯৫৬ সালে, সিলেট জেলার ফুলবাড়ী গ্রামে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিষয়ে পিএইচডি ।খণ্ডকালীন অধ্যাপক ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস এবং স্কুল অব হিউম্যান সার্ভিসেস-এর। ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আফ্রিকার ভিজিটিং স্কলার ছিলেন। শিক্ষকতা, গবেষণা ও কনসালট্যান্সির কাজে বহু দেশ ভ্ৰমণ করেছেন। বর্তমানে সিয়েরা লিওনে বাস করছেন।প্রথম আলো বর্ষসেরা বইয়ের পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন।