মাটির মধ্যে শিল্প থাকে না। কিন্তু যখন সে মাটি দিয়ে একটি মূর্তি নির্মাণ করা হয় তখন সে মাটি শৈল্পিক হয়ে ওঠে। আমাদের চারপাশে অসংখ্য ঘটনা আছে; কিন্তু সব ঘটনা গল্প হয়ে ওঠে না। আবার গল্প হলেও তার মধ্যে শিল্প থাকে না। বাংলা ছোটগল্পের চর্চা, বিকাশ এবং উৎকর্ষের বয়স খুব বেশি দিনের নয়। ইউরোপের সাহিত্য, বিশেষ করে গল্প-উপন্যাসের ধারা কিংবা গঠনকে বাংলা ভাষার লেখকরা আত্মস্থ করে নিয়েছেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ করে নিয়েছেন তাদের নিজের মতো করে। ইকবাল আহমদ এ সময়ের একজন লেখক। গল্পের প্রতি একনিষ্ঠতা ও পক্ষপাত রয়েছে তার প্রবলভাবে। ফলে গল্প নিয়ে তার চর্চা, নিরীক্ষা এবং পরীক্ষা থাকাটাই স্বাভাবিক। শব্দ, বাক্য আর চরিত্র সৃষ্টির ক্ষেত্রে তার দক্ষতা ঈর্ষণীয়। ইকবাল আহমদের এ গল্পগুলো পড়তে গেলে পাঠক হিসেবে বেশ প্রস্তুতি নিয়েই পড়তে হবে। উত্তর-আধুনিক সাহিত্য সম্পর্কে কম-বেশি আলোচনা হলেও এর গতি-প্রকৃতি কেমন কিংবা এর পাঠক কেমন হবে তা নিয়ে যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে। সে যা-ই হোক, শিল্প-সাহিত্য সব সময়ই সময়ের থেকে এগিয়ে থাকে। সচেতন পাঠ আর শিল্পকে আবিষ্কারের মনোভাব নিয়ে এ গল্পগুলো পাঠ করতে পারলে একধরনের মৌলিক বোধের সঞ্চয় হবে। নতুনত্বকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, সাহিত্যের নতুনত্ব মানেই নতুন দিগন্তের উন্মোচন। ইকবাল আহমদের সৃষ্ট চরিত্র ইহা, ইনকে নতুন সাহিত্য দিগন্তের অন্যতম মাইলফলক বলা যেতে পারে।