জীবনের অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছি। স্রষ্টার কৃপায় এখনো চলছি। পথ চলা এখনো একেবারে থেমে যায়নি। তবে কখন থেমে যায় ঠিক নেই, যাবে যাবে করছে। বছর দেড়েকের মতো হলো চলতে চলতে কোন একসময় বলাকা প্রকাশনে পৌঁছে গেলাম, প্রকাশকের সঙ্গে পরিচিত হলাম। একদিন কথাচ্ছলে বলাকা প্রকাশকের স্বত্বাধিকারী বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও গবেষক জনাব জামাল উদ্দিন হঠাৎ আমাকে মুক্তিযুদ্ধের উপর কিছু লিখতে বললেন। আমি তাঁকে নানান ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করলাম আমার দ্ধারা সে’টা সম্ভব নয়, হবেও না। আমি আসলে লেখক নই। কিছু কবিতা হয়ত লিখেছি, তিনি দেখেছেন। আসলে কিন্তু লেখালেখি আমি করি না। একটা কথা বলা হয়নি, প্রানি বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও অবসর জীবনে কিছু কবিতা লিখেছি এবং সে’সকল কবিতাগুলো বই আকারে প্রকাশিত হয়। তিনিই প্রকাশক। সে সকল কবিতায় মুক্তিযুদ্ধের কিছুটা গন্ধ হয়ত তিনি পেয়েছেন। সে’জন্য হয়ত ভেবেছেন আমি এই বিষয়ে কিছু লিখতে পারবো। যাক যা বলছিলাম, অবশেষে তিনি বারংবার আমাকে চেষ্টা করতে বলায় আমি অবশেষে তাঁর আবদার ফেলতে না পারায় সেই চেষ্টাই করতে বাধ্য হয়েছি। কতটুকু পেরেছি জানি না। তবে যদি এই লেখায় কোন কৃতিত্ব থাকে তবে সবটুকুই জামাল উদ্দিনের। মুক্তিযুদ্ধ যখন হয় তখন আমরা কলেজের ছাত্র, ১৯৭১ সাল। কিন্তু স্বাধীনতার এই আন্দোলনের বীজ বপন হয়েছিল তারও অনেক আগে। বৃটিশদের শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠি নানান ভাবে পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ জনগণকে তাদের নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে আসছিল। পূর্ব পাকিস্তানের কিছু মানুষকে সুযোগ সুবিধা দিয়ে তাদেরকে আজ্ঞাবহ বানিয়ে গোটা বাঙালি জাতিকে তারা তাদের নায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করতো। গণতন্ত্রের নামে বিভিন্ন ধরনের স্বৈর শাসন এ’দেশে তারা চালিয়ে ছিল। এ’দেশের সাধারণ মানুষ প্রথম প্রথম তা বুঝতেও পারেনি। বারংবার নির্যাতিত হয়ে ধীরে ধীরে তা উপলব্ধি করতে শুরু করে। দীর্ঘ দিনের পুঞ্জিভূত দুঃখÑদুর্দশা আর নির্যাতন তাদেরকে অসহিষ্ণু করে তুলে। একসময় ধৈর্যের সীমানা ভেঙ্গে যায়, ফলে সত্তর দশকে এসে ঘটালো এক মহা বিস্ফোরণ। তখন আমরা সবে স্কুল পেরিয়ে কলেজের ছাত্র। কৈশোর পেরিয়ে যৌবনের দিকে যাচ্ছি। সে হিসেবে অনেক কিছুই নিজের চোখে দেখেছি। উপলব্ধি করেছি। অনেক কিছুতে অংশও নিয়েছি। একটা দেশ যুদ্ধ করে স্বাধীন হতে অনেক ত্যাগের প্রয়োজন হয়। সে ত্যাগ অনেক বড় ত্যাগ। অনেক সময় জীবনও দিতে হয়। বর্তমান গাজা’ই তার উপযুক্ত প্রমাণ। কত বছর যাবত সংগ্রাম করছে ফিলিস্তিনিরা, প্রাণ দিচ্ছে, নানান ভাবে যুগের পর যুগ নির্যাতিতও হচ্ছে। আজও স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করতে পারেনি।