ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা বুড়িগঙ্গার কোল ঘেঁমা গড়ে ওঠা আমাদের গ্রিয় প্রাচীন ঢাকা। ঐতিহ্যবাহী এই ঢাকার স্মৃতিপাতায় জড়িয়ে আছে হাজার বছরের বাঙালির ইতিহাস, সংস্কৃতি।৪০০ বছরের পুরোনো ঢাকা দেখলেই যে কেউ বুঝতে পারেন কত বৈচিত্র্যময় রঙের প্রলেপই না পড়েছে এই শহরে। ঈশ্বর গুপ্ত বলেছেন, ‘ভাত মাছ খেয়ে বাঁচে বাঙালি সকল।’ এরপর মুসলমানদের আগমনের ফলে মধ্যযুগের বাঙালি সমাজের খাদ্যরীতিতে আসে নতুন এক পরিবর্তন। গোশত, মশলাদার খাবার, প্রচুর বাদাম আর তৈল-স্বদের আবির্ভাব ঘটে দৈনদিন খাদ্যাভ্যাসে। সুলতান-মুঘল কিংবা পারস্য-মধ্য এশীয় রীতিতে নিত্য প্রধান আহারের তালিকায় ভাতের পাশাপাশি যোগ হয় রুটি, তন্দুরি, নান আবার সাদা ভারতে সাথে যোগ হল পোলাও-বিরিয়ানি। এরও প্রায় ১৫০ বছর পর থেকে আমাদের খাদ্যরীতিতে আসতে শুরু করল মহাসাগর পেরিয়ে অন্য মহাদেশের খাবার। পর্তুগিজ, ইংরেজ, গ্রিক কিংবা ফরাসি প্রভাবে আমাদের খাবার সংস্কৃতিতে এল পাউরুটি, বিস্কুটি, কেক। জনপ্রিয় হতে থাকল চপ-কাটলেট, পেটিস। তবে এরও আগে চীনাদের সুবাদে আমরা পেয়ে যাই চায়ের স্বাদ।আর আমাদের পান-সুপারি সে তো প্রাচীন চর্যাপদ থেকে উল্লেখ্য। বস্তুত বাঙালি মাত্রই বোধহয় ভোজবিলাসী।জাতি-গোষ্ঠী ভেদাভেদে প্রচুর সংমিশ্রণ হলেও ঢাকাবাসী তার খাবার গ্রহণ, পরিবেশ-সর্বোপরি আলাদা আলাদা নানা বৈশিষ্ট্যর বৈচিত্যময় খাদ্যে নিজস্ব ধরন ও পছন্দ পরিমাপের মানটি আলাদা ঢঙে আজ অবধি টিকিয়ে রেখেছেন, রাখছেন। যদিও কালের গর্ভে হয়ে যাচ্ছে অনেক কিছুই বিলীন। কিছুর পরও একজন বাঙালি ও এই শহরের একজন বাসিন্দা হিসেবে আমি বিশ্বাস করি পুরান ঢাকার এই ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো বিগত ৪০০ বছরের মতো চিকে রবে হাজার বছর। আর তাই ঢাকার বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্যবাহী খাদ্যসম্ভারকে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজম্মের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্যই আমার এই প্রয়াস।