ফ্ল্যাপে লিখা কথা অতীত ও সমসাময়িক মনুষ্য কার্যাবরির খতিয়ান ইতিহাস হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। আখ্যান-উপখ্যান ,জনশ্রুতি ও কিংবদন্তি অনেক সময় ইতিহাসের পরিমন্ডলে অনুপ্রবেশ করে ঘটনার প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে রাখে।আবার একদেশদর্শী মনোভাবের কারণে ঐতিহাসিক ঘটনাবলির উপস্থাপন ও ব্যাখ্যা স্বাভাবক গতিপথ থেকে বিচ্যুত হয়। তাই প্রয়োজন পড়ে এমন এক অবিজ্ঞানের যা ঐতিহাসিক সকল তত্ত্ব ও তথ্যের নিরীক্ষণ ও পর্যালোচনার দ্বারা বিষয়ের স্বচ্ছতা ও বস্তুনিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে পারে। মানববিদ্যায় এই অবিজ্ঞান ইতিহাসচর্চা (Historiography) হিসেবে গন্য করা যায়। প্রাচীনকালে গ্রিসে ইতিহাস পঠন পাঠনের সুত্রপাত হরেও আরব মুসলমানদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও নিরলস সাধনার ফলে ইতিহাসচর্চা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। এই গ্রন্থে মহানবী (স:) চরিত ইতিহাস সংগ্রহ ও সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে মুসলিম চরিতকার,কাহিনীকার,কুলজিবেত্তা ও ইতিহাসবেত্তা কিভাবে গোত্রীয়,বংশীয় ,আঞ্চলিক, জাতীয় ও বিশ্ব ইতিহাস পঠন পাঠনের গতিপথ তৈরি করেছেন তার পর্যায়ক্রমিক আলোচনা উপস্থাপিত হয়েছে। আলোচনাকে প্রাণবন্ত করে তোলার উদ্দেশ্য প্রাথমিক যুগের আবর ঐতিহাসিকগনের মূল গ্রন্থ হতে ঘটনাবলিকে পেশ করা হয়েছে। উপরন্তু ছাত্র-ছাত্রী ও অনুসন্ধিৎসু পাঠকদের ধাবনের সুবিধার্থে এই গ্রন্থের ভূমিকায় এবং চারটি পরিশিষ্টে আরব ও পারসিক ইতিহাসচর্চার সমালোচনামূলক সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
সূচিপত্র * ভূমিকা * প্রথম অধ্যায়: আরবদের ইতিহাস চর্চার সূচনা * দ্বিতীয় অধ্যায়: মদিনায় ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রর মূলনীতি * তৃতীয় অধ্যায়: ঐতিহাসিক কাহিনীর কেন্দ্রের মূলনীতি * চতুর্থ অধ্যায়: ইরাকে ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের মূলনীতি * পঞ্চম অধ্যায়: ইতিহাসচর্চার প্রতি অনুপ্রেরণা সৃষ্টি এবং তার ক্ষেত্র প্রস্তুত ঐতিহাসিক গনের রচনাবলি হইতে সঞ্চয়ন * উরওয়া বিন যুবাইর * আল-যুহরী * উসমান ও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ * ওয়াহাব বিন মুনাব্বিহ * মুসা বি উকবা * মুহাম্মদ বিন ইসহাক * আল-ওয়াকিদী * ইবনে সা’দ * আবু মিখনাফ * সায়ফ বিন উমর * কদেসিয়া * নাসর বিন মযাহিম * আল মাদায়েনী * ইবন আল-কালবী(হিশাম বিন মুহাম্মদ) * মুসা’ব আল যুবাইরী * হায়সুম বিন আদী * আবু উবায়দা(মুয়াম্মাবিন আল-মুসান্না) আল-বালাযুরী * আল-ইয়াকুবী * ইবনে কুতায়বা * আল-দিনাওয়ারী * আল-তারাবী * পরিশিষ্ট-১ * পরিশিষ্ট-২ * পরিশিষ্ট-৩ * পরিশিষ্ট-৪ * গ্রন্থপঞ্জি
অধ্যাপক ড. এ কে এম ইয়াকুব আলী বাংলাদেশের বগুড়া জেলায় ১৯৩৯ সালের ১ আগষ্ট জন্ম গ্রহণ করে। তার পিতা মরহুম আলহাজ্জ মোহাম্মদ বাসতুল্লাহ শেখ এবং মা মরহুমা ফাতিমা । তিনি ঢাকা মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৯৫২ সালে আলিম পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে নবম স্থান অধিকার করেন। ১৯৫৪ সালে একই বোর্ড থেকে ফাজিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এবার প্রথম বিভাগে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছিলেন। ১৯৫৫ সালে ঢাকা মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ইংরেজি ও গণিত বিষয় যুক্ত করে কৃতিত্বের সাথে হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। হাদিস নিয়ে কামিল পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি লাভ করেন ১৯৫৬ সালে। মাদ্রাসা শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে অধ্যাপক ইয়াকুব আলী সাধারণ ধারার শিক্ষা কর্যক্রমে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আজিজুল হক কলেজ থেকে ১৯৫৮ সালে প্রথম বিভাগে আই এ পাশ করেন। একই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৯৬০ সালে পঞ্চম স্থান অধিকার করে বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এরপর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ শ্রেণিতে ভর্তি হন। প্রথম শ্রেণিত ২য় স্থান লাভ করে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৯৬২ সালে। অধ্যাপক ইয়াকুব আলী দ্বিতীয়বার এম এ ডিগ্রি লাভের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিষয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৭০ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। এই জ্ঞানতাপস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম ইউজিসি ফেলো হিসেবে পিএইচ ডি ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৮২ সালে। সমান দক্ষতার সাথে তার বিচরণ রয়েছে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, ফারসি এবং উর্দু ভাষায়। সংস্কৃত ভাষায়ও তাঁর প্রাথমিক দক্ষতা রয়েছে। এ যাবৎ তাঁর লেখা গবেষণা ও জনপ্রিয়ধারার ১৬ টি প্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। দেশ-বিদেশের জার্নালে ইংরেজি ভাষায় লেখা তাঁর প্রবন্ধের সংখ্যা ৬৬ টি, বাংলা ভাষায় লেখা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ১৮টি। আরবি ভাষায় অধ্যাপক ইয়াকুব আলীর লেখা ১টি প্রবন্ধও প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর তত্ত্বাবধানে এ পর্যন্ত ২৫ জন গবেষক পিএইচ ডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন, এম ফিল ডিগ্রি অর্জন করেছেন ৭ জন। আরো অকে গবেষক তাঁর তত্ত্বাবধানে গবেষণা করছেন। কলেজে শিক্ষকতা দিয়ে তিনি তাঁর পেশা-জীবনের যাত্রা শুরু করেন। এরপর ১৯৬৩ সাল থেকে তাঁর নতুন যাত্রা শুরু হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে। তবে মাঝখানে অল্প কিছু সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অধ্যাপক ইয়াকুব আলী ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতার পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করেছেন রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের সহকারী কিউরেটরের পদে। তিনি বিভাগীয় সভাপতি ও অনুষদের ডিন হিসেবেও দায়িত্বে সফল ছিলেন।