রাহুল সাংকৃত্যায়ন (জন্ম কেদারনাথ পান্ডে; ৯ এপ্রিল ১৮৯৩- ১৪ এপ্রিল ১৯৬৩) একজন ভারতীয় লেখক এবং একজন বহুভাষী যিনি ভোজপুরি এবং হিন্দিতে লিখেছেন।ভ্রমণকাহিনীকে 'সাহিত্যিক রূপ'প্রদানে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি ভারতের সর্বাধিক ভ্রমণকারী পণ্ডিতদের একজন ছিলেন, তাঁর জীবনের পঁয়তাল্লিশ বছর তাঁর বাড়ি থেকে দূরে ভ্রমণে ব্যয় করেছিলেন। তিনি একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী (ভিক্ষু) হয়েছিলেন এবং অবশেষে একজন মার্কসবাদী হয়ে ওঠেন। সাংকৃত্যায়ন ছিলেন একজন ভারতীয় দেশপ্রেমিক, ব্রিটিশ বিরোধী লেখা ও বক্তৃতার জন্য গ্রেপ্তার হয়ে তিন বছরের জন্য জেলে ছিলেন। তাকে তার বৃত্তির জন্য 'সর্বশ্রেষ্ঠ পণ্ডিত' হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তিনি ছিলেন পলিম্যাথ এবং বহুভুজ। ভারত সরকার তাকে ১৯৬৩ সালে পদ্মভূষণের বেসামরিক সম্মানে ভূষিত করে। শৈশব তিনি কেদারনাথ পান্ডে নামে একটি ভূমিহার পরিবারে [৩] ৯ এপ্রিল ১৮৯৩ সালে পান্ডাহা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক গ্রাম ছিল পূর্ব উত্তর প্রদেশের আজমগড় জেলার কানাইলা চক্রপানপুর । দর্শন প্রাথমিকভাবে, তিনি স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর আর্য সমাজের একজন গভীর অনুসারী ছিলেন। [উদ্ধৃতি প্রয়োজন] তারপর বৌদ্ধ ধর্ম তার জীবন পরিবর্তন করে। তার নামের সাথে এবং অবশেষে "রাহুল সাংকৃত্যায়ন" নামে ডাকা হয়। পরবর্তীতে তিনি একজন সমাজতান্ত্রিক হয়ে ওঠেন এবং পুনর্জন্ম এবং পরকালের ধারণা প্রত্যাখ্যান করেন। দর্শন-দিগদর্শনের দুটি খণ্ড, বিশ্বের দর্শনের সংগৃহীত ইতিহাস তাঁর দর্শনের একটি ইঙ্গিত দেয় যেখানে দ্বিতীয় খণ্ডটি ধর্মকীর্তি-র প্রমান বর্তিকাকে উৎসর্গ করে। এটি তিনি তিব্বত থেকে একটি তিব্বতি অনুবাদে আবিষ্কার করেন।
তাঁর জন্ম ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে সনাতন হিন্দু ভূমিহার ব্রাহ্মণ পরিবারে। জন্মস্থান উত্তর প্রদেশের আজমগড়ের একটি ছোট্ট গ্রাম। তাঁর আসল নাম ছিল কেদারনাথ পাণ্ডে। ছোটোবেলাতেই তিনি মাকে হারান। তাঁর পিতা গোবর্ধন পান্ডে ছিলেন একজন কৃষক। বাল্য কালে তিনি একটি গ্রাম্য পাঠশালায় ভর্তি হয়েছিলেন। আর এটিই ছিলো তাঁর জীবনে একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। অষ্টম শ্রেণী অবধি অধ্যয়ন করেছিলেন। এখানে তিনি উর্দু ও সংস্কৃতের উপর প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি বহু ভাষায় শিক্ষা করেছিলেন যথা : হিন্দি, উর্দু, বাংলা, পালি, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি, ইংরেজি, তিব্বতি ও রুশ।
পুরস্কার তালিকা পদ্মভূষণ (১৯৬৩) সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৫৮)
ব্যক্তিগত জীবন জালিওয়ানওয়ালা বাগের হত্যাকান্ড (১৯১৯) তাঁকে একজন শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী কর্মীতে রূপান্তরিত করে। এ সময় ইংরেজ বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে তাকে আটক করা হয় এবং তিন বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। এ সময়টিতে তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ সংস্কৃতে অনুবাদ করেন। পালি ও সিংহল ভাষা শিখে তিনি মূল বৌদ্ধ গ্রন্থগুলো পড়া শুরু করেন। এ সময় তিনি বৌদ্ধ ধর্ম দ্বারা আকৃষ্ট হন এবং নিজ নাম পরিবর্তন করে রাখেন রাহুল (বুদ্ধের পুত্রের নামানুসারে) সাংকৃত্যায়ন (আত্তীকরণ করে যে)।, জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি বিহারে চলে যান এবং ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ-এর সাথে কাজ করা শুরু করেন। তিনি গান্ধিজীর আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন এবং এসময় তিনি গান্ধীজী প্রণীত কর্মসূচীতে যোগদান করেন। যদিও তাঁর কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছিলো না, তবুও তার অসাধারণ পান্ডিত্যের জন্য রাশিয়ায় থাকাকালীন লেনিনগ্রাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে শিক্ষকতার অনুরোধ করা হয়। তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন। ভারতে এসে তিনি ডঃ কমলা নামক একজন ভারতীয় নেপালি মহিলা কে বিয়ে করেন। তাদের দুই সন্তান হয়, কন্যা জয়া ও পুত্র জিৎ। পরে শ্রীলংকায় (তৎকালীন সিংহল) বিদ্যালঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এখানে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দার্জিলিংয়ে, ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল তারিখে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।