বিংশ শতাব্দীর বাংলা কথাসাহিত্যের ভিন্নমাত্রিক রূপকার সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ (১৯২২-১৯৭৪)। তাঁর রচনাসমূহ গভীর জীবনবোধ, অন্তর্লোকের রহস্য উন্মোচন স্পৃহা, কুসংস্কারমুক্ত ও স্পষ্টবাদী উচ্চারণে সমৃদ্ধ। প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের বহুমাত্রিক জীবনাচরণের অভিজ্ঞতা থাকার ফলে অস্তিত্ববাদ, অভিব্যক্তিবাদ, মনোবিকলন তত্ত্ব প্রভৃতি তিনি আত্মস্থ করতে পেরেছিলেন। এসব পাশ্চাত্য তত্ত্ব নিজস্ব ভঙ্গিতে সাহিত্যে উপস্থাপন করেছেন। ফলে তাঁর সাহিত্য হয়ে উঠেছে বৈশ্বিক জীবনমথিত অভিজ্ঞান। বাংলা সাহিত্যে 'চেতনাপ্রবাহ রীতি' প্রথম তার হাতে পরিপূর্ণ সার্থকভাবে ফুটে ওঠে। তাঁর চেতন্যপ্রবাহ রীতিতে। রচিত উপন্যাস 'কাঁদো নদী কাঁদো' (১৯৬৮)। আঙ্গিক গঠনে পাশ্চাত্যের প্রভাব থাকলেও এর সমাজজীবন, পরিবেশ ও চরিত্রসমূহ স্বদেশীয়। 'কাঁদো নদী কাঁদো' উপন্যাসের ঘটনার প্রারম্ভ আবর্তিত হয় স্টীমারের মধ্যে। উপন্যাসের কাহিনি বিবৃত হয়েছে দুজন কথকের বয়ানে। উপন্যাসে একই সমান্তরালে দুটি কাহিনি বিবৃত হয়েছে- এক. মুহাম্মদ মুস্তফার জীবনকাহিনি, দুই. কুমুরডাঙ্গার জনপদের কাহিনি। খেদমতুল্লার ছেলে মুস্তফা বহু প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নিজের চেষ্টায় উচ্চশিক্ষা লাভ করে এবং কুমুরডাঙার ছোট হাকিম হিসেবে নিয়োগ লাভ করে। সেখানের প্রাক্তন উচ্চপদস্থ কর্মচারী আশরাফ হোসেনের সাথে তার পরিচয় হয়। আর সেই সূত্রেই আশরাফ হোসেনের মেয়ের সাথে পরিচয় হয়।