তাজবীদের নিয়মগুলো মনে না থাকার কারণে আমরা অনেকেই কোরআন সহীহ শুদ্ধভাবে পড়তে পারি না। এমনকি কুরআনের অর্থ না জানার কারণে আল্লাহ তাআলা কুরআনের মাধ্যমে আমাদেরকে কী উপদেশ দিয়েছেন তা অনুধাবন করতে পারি না। এ ক্ষেত্রে বাংলা অনুবাদসহ আকর্ষণীয় কালার কোডেড, তাজভিদ সংযোজিত সহজ আল কোরআনটি আমাদের জন্য খুবই সহায়ক হবে। ইনশাআল্লাহ। এই কুরআনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে - এটির শুরুতেই তাজবীদের নিয়মাবলী উল্লেখ করা আছে। তাজভিদের নিয়মগুলোকে ৭ টি ভিন্ন ভিন্ন রঙে কালার কোড করা হয়েছে। কালার হরফের কারণে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন কোথায় কোন নিয়মে পড়তে হবে। প্রত্যেক আরবি আয়াতে ৭ রকম তাজবিদের জন্য পৃথক ৭ টি কালার ব্যবহার করা হয়েছে। এবং কোন কালারে কোন তাজবিদ হবে সেটা প্রত্যেক পৃষ্ঠার নিচেও খুব সুন্দরভাবে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ তাজবিদের নিয়মগুলো মনে না থাকলেও পাঠক কালার দেখেই বুঝতে পারবে কোথায় কিভাব তাজবিদ আদায় করে পড়তে হবে। এই কুরআনে বিষয়ভিত্তিক আয়াতের সূচিপত্র দেয়া হয়েছে, কোন বিষয়ে আল্লাহ তাআলা কী বলেছেন খুব সহজেই আপনি সে বিষয়ে জানতে পারবেন। সহজ আল কোরআনের পৃষ্ঠার নিচে বিশেষ বিশেষ আয়াতে সূরা নাযিলের সময়কাল, নামকরণ, টিকা, শানে-নুযূল, ফজিলত ও আমলের ব্যাখাসহ সংক্ষিপ্ত তাফসীর দেয়া হয়েছে। বয়স্ক মা- বাবা কিংবা যাদের ছোট অক্ষর তেলাওয়াত করতে অসুবিধা হয় তাদের জন্য সহজ আল কোরআন হলো সর্বোত্তম সমাধান। এই কুরআনটি আরবী ফন্টে বড় বড় অক্ষরে ছাপানো হয়েছে যাতে ছোট বড় সব বয়সের পাঠকদের পড়তে সুবিধা হয়। সহজ আল কুরআনটির বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট রয়েছে। যেমন:- √ রঙিন হরফে তাজবিদের নিয়মাবলী। √ বানানরূপে আরবি হরফসমূহের পরিচয়। √ কুরআন শরীফ খতম করার পদ্ধতি। √ কুরআন নাযিলের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। √ কুরআন তিলাওয়াতের ফজীলতপূর্ন আলোচনা। √ কুরআনে ব্যবহৃত ওয়াকফের চিহ্নসমূহের বিস্তারিত বিবরণ। √ কুরআনুল কারীম তিলাওয়াতের আদব সম্পর্কে আলোচনা। √ বিষয়ভিত্তিক আয়াতের সূচিপত্র। √ সিজদায়ে তিলাওয়াতের বিবরণ। √ এই কুরআনে ব্যবহৃত বিশেষ চিহ্নসমূহের বিবরণ। √ কুরআনটির শেষের দিকে সূচিপত্রে দেয়া আছে, প্রতিটি সূরার নাম, নামের অর্থ, অবতীর্ণের স্থান ও আয়াত সংখ্যা ইত্যাদি। এ ছাড়াও কুরআনটি আরও বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হওয়ার কারণ হলো: √ এই কুরআনটি ছাপা হয়েছে ১০০ জি-এস-এম জার্মানি নিভিয়া গ্লোসি আর্ট পেপারে। √ এটি বাঁধাই করা হয়েছে প্রিমিয়াম কোয়ালিটির হার্ডবোর্ড দিয়ে। যা আপনি হাতে নিলেই অনুভব করতে পারবেন। √ সহজ আল কুরআনের কভারটি ডিজাইন করা হয়েছে কাবা শরীফের গিলাফের আদলে। ৩৫০ গ্রাম আর্টকার্ডে কভারটি তৈরি করা হয়েছে, যা গোল্ডেন কালার ফয়েল করে লেমিনেশন করা হয়েছে খুব নিখুঁতভাবে। আসুন নিজে কুরআন পড়ি, প্রিয়জনকে হাদিয়া দিয়ে আখিরাতে বিনিয়োগ করি। ভালো থাকুন। কুরআনের আলোকে জীবন গড়ুন।
হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং এর গন্ডি পেরিয়ে যিনি হাজারো মানুষকে দিয়েছেন আত্মশুদ্ধি ও তাসাওউফ এর শিক্ষা। যার কারণে তাঁর উপাধি ছিলো ‘হাকীমুল উম্মাত’ বা উম্মাহর আত্মিক চিকিৎসক। উপমহাদেশে মুসলমানদের মাঝে সুন্নতের জ্ঞান প্রচারে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ‘দাওয়াতুল হক’ এর অবদানের জন্যও প্রসিদ্ধ মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর নাম। মাওলানা আশরাফ আলী থানভী ১৯ আগস্ট, ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে (রবিউস সানী ৫, ১২৮০ হিজরী) ভারতের উত্তর প্রদেশের থানাভবনে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই হাফেয হোসাইন আলী রাহ.-এর কাছে সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাঁর শিক্ষাজীবন। নিজগ্রামেই ছোটবেলায় হযরত মাওলানা ফতেহ মুহাম্মদ থানভী রাহ.-এর কাছ থেকে আরবি ও ফার্সি ভাষার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১২৯৫ হিজরীতে তিনি দারূল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানের উচ্চতর শাখাগুলোয় বিচরণ করার আগ্রহে। সেখানে তিনি পাঁচ বছর হাদীস, তাফসীর, আরবি সাহিত্য, ইসলামী দর্শন, যুক্তিবিজ্ঞান, ইসলামি আইন এবং ইতিহাস বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। দেওবন্দে শিক্ষার অধ্যায় সমাপ্ত করে মক্কা মুকাররমায় মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কীর কাছে কেরাত ও তাজবীদ শেখেন। তিনি কানপুরের একটি মাদ্রাসায় মাত্র ২৫ টাকা বেতনে শিক্ষকের পদ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে কানপুরের টপকাপুরে জামিউল উলূম মাদ্রাসার প্রধান পরিচালকের আসন অলংকৃত করেন এবং দীর্ঘ ১৪ বছর সেখানে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে তাঁর শিক্ষক হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কীর রহ. পরামর্শে তিনি থানা ভবনের খানকাহে ইমদাদিয়ায় অবস্থান গ্রহণ করেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। সারা জীবনে আশরাফ আলী থানভী এর সকল বই এর হিসেব করতে গেলে ছোট-বড় মিলিয়ে তা সাড়ে বারো হাজার ছাড়িয়ে যায়। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর বই সমূহ এর মধ্যে ফিকাহ বিষয়ক বই ‘বেহেশতী জেওর’ উপমহাদেশের মুসলমানদের মাঝে বহুল পঠিত। এছাড়া তাঁর রচিত কুরআন শরীফের উর্দু তরজমার গ্রন্থ বয়ানুল কুরআনও (কুরআনের ব্যাখ্যা) এর ভাষা ও ব্যখ্যাশৈলীর জন্য প্রসিদ্ধ। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর বই সমগ্র এর স্বত্ত্ব তিনি জাতির কল্যাণে উন্মুক্ত করে রেখে গেছেন। জুলাই ১৯, ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে (১৬ রজব, ১৩৬২ হিজরী) আল্লামা থানভী রহ. তাঁর জন্মস্থান থানা ভবনেই মৃত্যুবরণ করেন।