লেখক তার কৈশোর জীবনে আত্মিক পরিশুদ্ধির চিন্তায় এমন এক দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন যা থেকে বের হয়ে আসা যে কারো জন্যই শুধু কঠিন নয় রীতিমত দুঃসাহসিকও বটে। একদিকে তার জন্ম ও বেড়ে উঠা চিরচেনা, চিরপরিচিত পরিবার ও সমাজ; অন্যদিকে সত্যের শাশ্বত আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্রোতের বিপরীতে পরিশুদ্ধ পথ চলা। বংশ পরম্পরা ঐতিহ্যকে ছেড়ে দিয়ে নতুনকে জীবনের ব্রত করে নেয়া এবং সে অনুযায়ী জীবন সাজানো সত্যিই রোমাঞ্চকর। এমনটা ঘটতো না, যদি না চিরচেনা বিশ্বাসগুলো বাস্তবতার সাথে দ্বন্দ্বে রূপ নিত। স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে বল্গাহীন পশুর জীবন, কখনো ক্ষমতার প্রশ্নে দেবতাদের ক্ষমতা ভাগাভাগি, কখনো সৃষ্টিকে স্রষ্টার রূপ প্রদান, কখনো স্রষ্টাকে পিতা আসনে সমাসীন করা পুঁজা-অর্চনার নামে মানুষেরই অবমাননা ইত্যাদি রকমের ধর্মতাত্ত্বিক ও দার্শনিক মতবাদ লেখকের মনস্তাত্বিক জীবনকে প্রতিনিয়ত দুমড়ে-মুছড়ে একাকার করছিল। এমনতর দ্বিধা-দ্বন্দ্বই তাকে চিন্তার বৈপ্লবিক মোহনায় নিয়ে আসতে সহযোগিতা করেছে অলৌকিকভাবে। মূলত ভাঙ্গা-গড়ার এই মহাসমুদ্রে নিজের ধর্মীয় অস্তিত্বকে নিয়ে মহাসংকটের মুখোমুখি হন তিনি। এ সংকট আর দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থেকে উত্তরণত্তোর রোমাঞ্চকর অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ এ বই। আশা করা যায় সম্মানিত পাঠকদেরকেও এ বই রোমাঞ্চিত করতে পারবে ইনশাল্লাহ।
আবদুল্লাহ্ আল-আমিন ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৯ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চৌদ্দগ্রাম থানাধীন শ্রীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০০১ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে গণিতে স্নাতক এবং ২০০৪ সালে তিতুমীর সরকারি কলেজ থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। অধিকন্তু তিনি ২০০৯ সালে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ থেকে সফলতার সাথে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্র জীবনে তিনি একজন সফল সংগঠক ও তুখড় বিতার্কিক ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ভিক্টোরিয়া কলেজের ডিবেটিং সোসাইটি (VCDS)-এর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। স্কুল জীবনে তিনি বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর্পস (বিএনসিসি)-এর সদস্য ছিলেন। জনাব আল-আমিন তরুণ বয়স থেকেই বাংলাদেশের আদর্শিক ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে একজন সমাজকর্মী হিসেবে ঢাকা উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরস্থ ‘ফ্রেন্ড এন্ড ফ্যামেলি সোসাইটি’র সম্মানিত সদস্য। ২০০৮ সালে তিনি বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইসলামিক থ্যট (বিআইআইটি)- আমেরিকানভিত্তিক আন্তর্জাতিক ইসলামিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সমন্বয়ক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ২০১৮ সালে সহকারী পরিচালক হিসাবে চাকরি জীবন থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি গ্রহণ করেন। বহুমুখী অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ আবদুল্লাহ্ আল-আমিন এখন একজন সফল উদ্যোক্তা। ২০১৮ সালে চাকরি থেকে অব্যাহতি গ্রহণের পরপরই বাংলাদেশের শীর্ষ রপ্তানি শিল্প গার্মেন্টস এক্সেসরিজ-এর ব্যবসা শুরু করেন। তিনি তুলনামুলক ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে দীর্ঘ ১২ বছর গবেষণা করেছেন। ২০১৪ সাল থেকে লেখালেখির সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত আছেন। তিনি শিশুদের জন্য পাঁচটি মৌলিক গ্রন্থ লেখা প্রায় শেষ করেছেন যা শীঘ্রই প্রকাশিত হবে, ইনশাল্লাহ। এছাড়াও তার নিজ জীবনীগ্রন্থ লেখার কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের গভীর জ্ঞান সমুদ্রে ডুব দিয়ে তিনি নিজের জীবনের কল্পিত ও ভ্রান্ত ধর্ম বিশ্বাসের দ্বন্দ্বসমূহের দরজা উম্মোচিত করেন এবং একপর্যায়ে ইসলামের সুপেয় সুধা পান করে ধন্য হন। ব্যক্তিজীবনে আবদুল্লাহ্ আল-আমিন ৩ সন্তানের গর্বিত পিতা।