আমাদের জগৎ বস্তুত রৌদ্রালোকিত, তবু অতি-পরিচয়ে মনোযোগের কেন্দ্র হঠাৎ হঠাৎ দূরে সরে যায়। জীবনের এমন অনেক পরিসর আছে যা সজল, ছায়াবৃত, জ্যোৎস্নার রহস্যে মোড়া, অপরিচিত; সে সব আমাদের নিত্যদিনের খুব কাছাকাছি, তবু আমরা এড়িয়ে যাই, লক্ষ করি না। জীবনের ঘেরাটোপ ভেঙে মানসিক খাঁচার দরজা খুলে নানান অনুষঙ্গের জাল বুনে আমাদের কবিতায় ফুটিয়ে তুলতে চাই নতুন পৃথিবী, নতুন পরিসর, নতুন প্রতিবেদন। প্রেম, সামাজিক কিংবা অসামাজিক আচরণ, মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা, ঐতিহাসিক সত্য, প্রকৃতি, গার্হস্থ্য জীবন, অতি-প্রাকৃতের চমক--আসলে বিষয় যা-ই হোক না কেন, কবিতাকে কবিতা হয়ে ওঠার জন্য বিশেষ কিছু সৌকর্যে বেড়ে উঠতে হয়। কখনো সুন্দর কখনো-বা অসুন্দরের অন্তরে তাকে নিমজ্জিত হতে হয়। বর্ণনা, সংকেত, শ্লেষ, গিমিক, ধাঁধা, হাস্যরস, পারলে উদ্ভট্টি নানান কিছু দিয়ে তার অস্তিত্বের জানান দিতে হয়। টিকে থাকার প্রতি ধাপেই আমরা চিন্তা করছি, নিজেকে ব্যক্ত কখনো গঠন করছি। কবিতার প্লাবনে কাহিনিকে ভাসাচ্ছি, আগুনে পোড়াচ্ছি। যে-কোনো মুহূর্তেই কবি তার গতিকে বদলে দিতে পারে। প্রথাকে পরিণত করতে পারে উপহাসে। এ-গ্রন্থের কবিতাগুলো আপন উদ্ভাসনে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চিত্র ও চরিত্রদের সঙ্গী করে বিচিত্র আলপথ ধরে ছুটেছে। খানিকটা অনুধাবন, কেবল ছোঁয়া কিংবা আঘ্রাণ অথবা ভ্রমণ--প্রগাঢ়ভাবে সকলের অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে।