যখন আমার ১০ বছর বয়স, তখন থেকেই আমার বিক্রয়ের কাজ শুরু হয়। তখন আমি গ্রীষ্মে ওয়াইএমসিএ শিবিরে আমার উপার্জনের জন্য রোসমেল বিউটি সাবান বিক্রি শুরু করি। সেই থেকে আমি পড়াশোনা করছি, বই পড়ছি এবং বিক্রয় সম্পর্কে আরও জানার চেষ্টা করছি, কারণ আপনি যেমন চান তেমনি আমিও সফল হতে চেয়েছিলাম। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে আমি ভাবতে শুরু করেছিলাম, “কেন কিছু বিক্রয়কর্মী অন্যদের চেয়ে বেশি সফল?” কেন এমন কিছু বিক্রয়কর্মীরা দ্রুত এবং সহজে বেশি অর্থ উপার্জন, এবং আরও বেশি বিক্রয় করে? কেন তারা বেশি সাফল্য উপভোগ করে, গাড়ি, বাড়ি এবং সুন্দর পোশাকের মতো আরও ভালো উপকারের সুবিধা অর্জন করে এবং তাদের কর্মজীবনে আরও বেশি সন্তুষ্টি অর্জন করে যখন বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ বিক্রয়কর্মী কম অর্জন করছে এবং তাদের পারফরমেন্স এত নিচু? পেরেটো: প্রথম নীতি আমি পেরেটো নীতি হিসেবে পরিচিত বিখ্যাত এইটি/টুয়েন্টি নিয়মটি আবিষ্কার করেছিলাম। এই নিয়ম বলছে যে ৮০ শতাংশ বিক্রয় ২০ শতাংশ বিক্রয়কর্মী দ্বারা করা হয়। এর অর্থ, ২০ শতাংশ বিক্রয় ৮০ শতাংশ বিক্রয়কেন্দ্রিক কাজ দ্বারা তৈরি করা হয়। যখন এই নীতিটি শিখেছি তখন আমি একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম শীর্ষ ২০ শতাংশে ঢুকতে আমাকে যা করতে হবে তা আমি করতে যাচ্ছি। এবং আমি তা করেছিলাম। কয়েক বছর আগে, হাজার হাজার এজেন্ট সহ একটি বড়ো বিমা সংস্থা তার আয় এবং বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এইটি/টুয়েন্টি নিয়মের কার্যকারিতা পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সংস্থাটি কম্পিউটারের মাধ্যমে তার এজেন্টদের সমস্ত বিক্রয় ও আয়ের ডেটা চালায় এবং এই নিয়মটি সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছিল। এজেন্টদের বিশ শতাংশ ব্যবসার ৮০ শতাংশ উৎপাদন করে যাচ্ছিল। প্রতিষ্ঠান পরিচালকরা তখন জিজ্ঞেস করলেন বার্ষিক আয়ের ক্ষেত্রে এটি কী বোঝায়? তারা দেখতে পেলেন যে শীর্ষস্থানীয় ২০ শতাংশ এজেন্ট উপার্জন করছে, গড়পড়তা ৮০ শতাংশ যা আদায় করছে, তার ষোলোগুণ। এর অর্থ কি শীর্ষ ২০ শতাংশ নিচের ৮০ শতাংশের চেয়ে ১৬ গুণ ভালো, স্মার্ট বা আরও দক্ষ ছিল? সুস্পষ্ট উত্তর: কারও চেয়ে কেউ ষোলোগুণ ভালো বা বুদ্ধিমান নয়। কিছু লোক নির্দিষ্ট সময়ের সঙ্গে নিয়মিতভাবে কিছুটা হলেও উন্নত হয়। শীর্ষ ২০ শতাংশের শীর্ষ ২০ শতাংশ-তারা তাদের এজেন্টদের শীর্ষ ৪ শতাংশ (শীর্ষ ২০ শতাংশের শীর্ষ ২০ শতাংশ)-এর দিকেও নজর রেখেছিল এবং তাদের উপার্জনকে বিক্রয় ও আয়ের নিচের ৮০ শতাংশের এজেন্টগুলির সঙ্গে তুলনা করেছিল। দেখা গেল যে শীর্ষ ৪ শতাংশ এজেন্ট উপার্জন করছে, নিচের ৮০ শতাংশের তুলনায় গড়ে বত্রিশগুণ বেশি। এটিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে তারা শীর্ষে ০.৮ শতাংশ এজেন্টদের (শীর্ষ ৪ শতাংশের শীর্ষ ২০ শতাংশ) তুলনা করে এবং দেখতে পেল যে এই অভিজাত গোষ্ঠীটি নিচের ৮০ শতাংশ জনগণের আয়ের চেয়ে গড়ে পঞ্চাশগুণ বেশি আয় করছে। প্রতিটি শহর বা বড়ো অফিসে একজন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি নিজেই, পঞ্চাশ-পূর্ণ বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির মতো একই পণ্য একই ব্যক্তিদের কাছে একই দামে, একই প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতিতে বিক্রি করতেন। একই অফিসে, যখন গড় বিক্রয়কর্মী, বিশেষত সমস্ত কমিশন ক্ষেত্রগুলিতে প্রতি বছর ৩০,০০০ থেকে ৪০,০০০ ডলার উপার্জন করেন, তখন সেই ক্ষেত্রগুলির শীর্ষ ১০ শতাংশ প্রতি বছর ৮৮,০০,০০০-এরও বেশি উপার্জন করেন এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ কয়েক মিলিয়ন আয় করে থাকেন।
ব্রায়ান ট্রেসি একজন কানাডিয়ান-আমেরিকান বক্তা এবং আত্মোন্নয়নমূলক রচনা লেখক। তিনি 'ব্রায়ান ট্রেসি ইন্টারন্যাশনাল' নামক সংস্থার চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী। এই সংস্থার মূল উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ ও বিকাশে সহযোগিতা এবং সার্বিক উন্নয়নে কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা। ব্রায়ান ট্রেসি নেতৃত্ব, ব্যক্তিত্ব, আত্মসম্মান, লক্ষ্য, কৌশল, সৃজনশীলতা এবং সাফল্য- মনোবিজ্ঞানের এই শাখাগুলোর তাৎপর্য অনুধাবনের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করার কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। জনপ্রিয় এই বক্তার জন্ম কানাডার প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ডে, তারিখটা ১৯৪৪ সালের ৫ জানুয়ারি। পড়াশোনা করেছেন ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টা থেকে। ১৯৮৪ সালে কানাডার ভ্যানকুভারে তিনি 'ব্রায়ান ট্রেসি ইন্টারন্যাশনাল' প্রতিষ্ঠা করেন। তার ৪০ বছরের বেশি কর্মজীবনে তিনি প্রায় ১,০০০ এরও বেশি প্রতিষ্ঠানকে কাউন্সেলিং সেবা দিয়েছেন, এবং প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ মানুষের সামনে বক্তব্য রেখেছেন। কানাডা, আমেরিকার বাইরেও প্রায় ৭০টি দেশে তার প্রচারিত আলোচনা অনুষ্ঠানের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়েছে। ব্রায়ান ট্রেসি এর বই এবং তার আলোচনার ভিডিও ও অডিও ক্লিপ সারা বিশ্বের কর্পোরেট ও ব্যক্তিপর্যায়ের উদ্যোক্তা তরুণদের কাছে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তিনি বিশ্বব্যাপী প্রচারিত ও বিক্রিত ' সাইকোলজি অব এচিভমেন্ট'সহ প্রায় ৫০০টিরও বেশি অডিও ও ভিডিও প্রোগ্রাম তৈরি ও প্রযোজনা করেছেন, যা ২৮টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ব্রায়ান ট্রেসি এর বই সমগ্র হলো 'দ্য ২১ সাকসেস সিক্রেটস অব সেল্ফ মেইড মিলিওনিয়ারস', 'টাইম ম্যানেজমেন্ট', 'ইট দ্যাট ফ্রগ!', 'চেঞ্জ ইয়োর থিংকিং চেঞ্জ ইয়োর লাইফ', 'লিডারশিপ', 'কিস দ্যাট ফ্রগ', 'নো এক্সকিউজ : দ্য পাওয়ার অব সেল্ফ ডিসিপ্লিন' ইত্যাদি। ট্রেসির লেখা বইগুলো তার অনুপ্রেরণা জোগানো বক্তব্যগুলোর মতই আকর্ষণীয় ও শিক্ষণীয়। কর্পোরেট ম্যানেজমেন্টের জগতে আত্মোন্নয়নমূলক পন্থা বাতলে তরুণদের কাছে ব্রায়ান ট্রেসি এর বই সমূহ বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।