কেউ যদি বলে কবিতাটি বুঝিনি, বুঝতে হবে কবিতার পাঠক নন তিনি। কারণ কবিতা সম্বন্ধে ‘বোঝা’ কথাটাই অপ্রাসঙ্গিক। আসলে কবিতা আমরা কেউ বুঝি না; বরং কবিতা আমরা ছুঁয়ে দেখি, অনুভব করি। কবিতা আমাদের কিছু ‘বোঝায়’ না; স্পর্শ করে, স্থাপন করে একটা সংযোগ। এই সংযোগটা হলো প্রেম। কোকিলের গান কেন এতো মধুর হয়? কারণ, কোকিল তো রাধা হয়ে ডাকছে তার কৃষ্ণকে। এই কৃষ্ণ কিন্তু মানুষ না, পাখি না, সমুদ্র না--কৃষ্ণ হলো সংযোগ, কৃষ্ণ হলো সম্পর্ক, কৃষ্ণ হলো প্রেম। ফুল ও প্রজাপতি এক তো নয়! কিন্তু ফুল প্রজাপতির অপেক্ষায় থাকে। কোথায় চাঁদ আর কোথায় সমুদ্র, কিন্তু সমুদ্রের জল ফুলে ওঠে চাঁদের টানে। যেখানে প্রেম আছে সেখানে আনন্দ আছে। যেখানে আনন্দ আছে সেখানে সংগীত আছে, নৃত্য আছে, কাব্য আছে। মানব হৃদয়ে যখন প্রেম আসে, তখন সমগ্র প্রকৃতি মানুষের ভাবনায় আসে ভিন্ন রূপে। প্রেমিকের চোখে সমগ্র প্রকৃতি যেমন ধরা দেয় ভিন্ন রূপে, তেমনি প্রকৃতিও সাজে ভিন্নরূপে প্রেমের ঐশর্যে। ভালো কবিতার প্রধান লক্ষণই এই যে তা ‘বোঝা’ যাবে না, ‘বোঝানো’ যাবে না। আমাদের দেশের বর্তমান সময়ের কবিদের মধ্যে মল্লিকা বিশ্বাস একেবারে স্বতন্ত্র। তাঁর কবিতার মূল উৎস প্রেম, তাঁর কবিতার মাঝে সেই যে একজন চিরকালের কবিকে দেখতে পাই যার দেশ নেই, কাল নেই, জাতি নেই, গোত্র নেই, মানুষের সমস্ত সুখ দুঃখ সভ্যতার সমস্ত উত্থান পতন পার হয়ে যার সুর আজকের মতো কোনো এক বসস্ত প্রভাতে হঠাৎ মনে এসে ঘা দেয়, আর মুহূর্তে উচ্চনিনাদি প্রকাণ্ড বর্তমান সমগ্র অতীত ভবিষ্যতের মধ্যে বিলীন হয়ে যায়--সেই নামহারা ক্ষণস্থায়ীকে কিছু সময়ের জন্য যেন কাছে পেলাম তাঁর ‘একান্ত আঙিনা’ বইটিতে।