সাফল্য অর্জনের উপায় আমাদের জীবন চলার পথটা রেলগাড়ির মতো সমান্তরাল নয়। চলতি পথে আমাদেরকে নানা বাধা-বিপত্তির মুখোমুখি হতে হয়। এসব বাধা-বিপত্তি উত্তরণে ব্যর্থ হলে আমরা অনেকেই মুষড়ে পড়ি, হতাশ হয়ে পড়ি এবং দিন শেষে ব্যর্থতাকেই বরণ করে নেই। তাছাড়া আমরা প্রায় সবাই জীবনে সফল হতে চাই, চাই সুখী-সুন্দর একটি জীবন গড়ে তুলতে। কিন্তু আমরা অনেকেই সেই কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জন করতে পারি না। এর কারণ হলো বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে সফল হওয়ার উপায়গুলো আমরা ভালোভাবে জানি না। আর জানি না বলে সেই উপায়গুলো প্রয়োগ করতে পারি না, যার ফলাফল হিসেবে আমাদের জীবনে নেমে আসে হতাশা আর ব্যর্থতা। এর বিপরীতে আমরা যদি নিজের সামর্থ্য ও দুর্বলতার জায়গাগুলো চিনতে পারি, বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে উঠার উপায় জানতে পারি, সেই সঙ্গে পাই একটু অনুপ্রেরণা, তাহলে আমরা আমাদের জীবনকে সহজ-সুন্দর ও সফল করে তুলতে পারবো। আশার কথা হলো, বর্তমান গ্রন্থটি এক্ষেত্রে আমাদেরকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসবে। সংকলিত এই গ্রন্থটি পড়ার মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো জীবনের ৮৫টি ক্ষেত্রে বাধা-বিপত্তি উত্তরণ এবং সফল হওয়ার সহজ ও কার্যকরী উপায়। আশা করা যায়, এই পরামর্শগুলো কাজে লাগিয়ে আমরা খুব সহজেই জীবনকে সুখী-স্বাচ্ছন্দ্যময় ও সফল করে তুলতে পারবো। থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: 'ধনীরা কী করে ধন-সম্পদ অর্জন করে তা জানার জন্য আমি (গ্রন্থকার) পঁচিশ বছর ধরে গবেষণা করেছি। এই সময় আমি পঁচিশ হাজার মানুষের জীবন বিশ্লেষণ করেছি। এই গবেষণা ছাড়া সম্ভবত এই বই লেখা যেত না। 'এই বইয়ে ধন-সম্পদ উপার্জনের সেই গোপন সূত্রাবলি বর্ণনা করা হয়েছে, যেগুলো ব্যবহার করে পাঁচশতের অধিক মানুষ সম্পদশালী হয়েছেন, যাদেরকে আমি (গ্রন্থকার) দীর্ঘ সময় ধরে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। 'এই হয়েছিলেন। বইয়ের গোপন রহস্যটি ব্যবহার করে লাখো নারী-পুরুষ ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন। এই রহস্য ব্যবহার করে অনেকে (বিরাট) সৌভাগ্যের অধিকারী 'এই বইয়ে উল্লেখিত পদ্ধতি যারা একবার আয়ত্ব করেন, এবং প্রয়োগ করেন, তারা খুব অল্প চেষ্টাতেই ক্রমাগতভাবে সাফল্যের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। তারা কখনো পুনরায় ব্যর্থতায় পড়েন না।
আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করা অলিভার নেপোলিয়ন হিল আত্মোন্নয়নধর্মী রচনা লেখকদের মাঝে প্রথমদিককার একজন। ব্যক্তিগত উন্নয়ন ও সফলতা লাভের বিভিন্ন দিক লেখনীতে তুলে এনে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সফল আত্মোন্নয়নমূলক লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে হিলের। নেপোলিয়ন হিলের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের সাউথইস্ট ভার্জিনিয়ায় ২৬ অক্টোবর, ১৮৮৩ সালে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে শেষ পর্যন্ত ল'স্কুলের পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি তিনি। এর আগে থেকেই যুক্ত ছিলেন সাংবাদিকতার সাথে, সেই ১৩ বছর বয়স থেকে। ১৯০৮ সালে এন্ড্রু কার্নেগীর সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে হিলের জীবনে আসে বিশাল পালাবদল। তখনকার সময়ের অন্যতম প্রভাবশালী শিল্পপতি কার্নেগী তাকে পরামর্শ দেন ধনী ও সফল ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিতে ও তাদের সাফল্যের সূত্র সম্পর্কে জানতে। এরপর তিনি বিশ্ববিখ্যাত সফল ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু করেন। এই তালিকায় আছেন হেনরি ফোর্ড, আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলসহ আরো অনেকে। এমন ৪৫টি সাক্ষাৎকারের লব্ধ অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি প্রকাশ করেন তাঁর প্রথম রচনা 'দ্য ল অব সাকসেস'। এই বইয়ে তিনি সাফল্যের সূত্রকে ব্যখ্যা করেছেন গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, পুঁজিবাদের সমন্বয়ে মূর্ত দর্শন দিয়ে। নেপোলিয়ন হিল এর বই সমূহ সাফল্যগাঁথার চেয়ে সাফল্যের পেছনের সূত্র সহজীকরণের পাথেয় হিসেবে অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বিখ্যাত এই লেখকের চরিত্রের কিছু রহস্যময় বৈশিষ্ট্য মানুষকে ভাবিয়েছেও বটে। তিনি দাবি করতেন, আত্মাদের সাথে তাঁর যোগাযোগ আছে, তাঁকে দেয় আধ্যাত্মিক জ্ঞান, সাফল্যের মন্ত্র। হিল এই বিষয়টি তাঁর ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত বই 'গ্রো রিচ(!) উইথ পিস অব মাইন্ড' এ খোলাখুলিভাবে বর্ণনা করেছেন। বর্তমানে তাঁর জীবনের অজানা কিছু অধ্যায় উঠে এসেছে গবেষকদের চোখে। তবে নেপোলিয়ন হিল এর বই সমগ্র বিতর্কিত ব্যক্তিজীবনের প্রভাবেও জনপ্রিয়তা হারায়নি। তাঁর রচিত 'থিংক এন্ড গ্রো রিচ' সর্বকালের সেরা আত্মোন্নয়নমূলক দশটি বই এর তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী সমাদৃত নেপোলিয়ন হিল এর বই সমূহ হলো 'অ্যাটিটিউড মেন্টাল পজিটিভা', 'দ্য মাস্টার কি টু রিচেস', 'সাকসেস হ্যাবিটস' ইত্যাদি। বিতর্কিত চরিত্রের এই লেখক ১৯৭০ সালের ৮ নভেম্বর বেশ রহস্যজনকভাবে মারা যান। ধারণা করা হয়, তিনি পারকিনসন্স সিন্ড্রোমে ভুগছিলেন।