খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. সামরিক ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ একজন জেনারেল। তিনি ছিলেন এমন একজন বীর যোদ্ধা, যাঁর দীর্ঘ সামরিক জীবনে পরাজয় শব্দটি ছিল অজ্ঞাত। পরিস্থিতির প্রতিকূলতা ও স্বীয় বাহিনীর সৈন্যসংখ্যার স্বল্পতা সত্ত্বেও তিনি কয়েক গুণ শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এমন কিছু অভিযান পরিচালনা করে বিজয় অর্জন করেছিলেন, সমর বিদ্যার আলোকে যাকে শুধু বিস্ময়কর বলা যায়। এটা কি করে সম্ভব হয়েছিল? সাধারণভাবে মনে করা হয় যে, খালিদ রা. তাঁর বাহুবল ও ঈমানী শক্তির জোরেই একটির পর একটি যুদ্ধ জয় করেছিলেন। বাংলা ভাষায় রচিত তাঁর কিছু জীবনী গ্রন্থ পাঠ করেও এ ধারণার সমর্থন পাওয়া যায়। আসলে ব্যাপারটি কি তাই? লে. জেনারেল এ আই আকরাম রচিত 'দি সোর্ড অব আল্লাহ্' গ্রন্থটি পাঠ করে আমি সঠিক জবাব লাভ করেছি। লেখক তাঁর দীর্ঘ সামরিক জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে খালিদ রা.-এর সামরিক দূরদৃষ্টি ও রণকৌশলের প্রয়োগগত দক্ষতার নিখুঁত বর্ণনা দান করেছেন। তিনি খালিদ রা. পরিচালিত অভিযানসমূহের প্রতিটি ক্ষেত্র সরেজমিনে পরিদর্শন করেন এবং প্রাথমিক যুগের ঐতিহাসিকগণের বর্ণনার সঙ্গে তাঁর পরিদর্শনের অভিজ্ঞতাকে মিলিয়ে যুদ্ধগুলোর একটি বিশ্বাসযোগ্য বর্ণনা দাঁড় করাতে সক্ষম হন। যুদ্ধের বর্ণনার পাশাপাশি তিনি খালিদ রা.-এর ব্যক্তিত্বে সামরিক নেতৃত্বের গুণাবলির বিকাশ যেভাবে আবিষ্কার করেছেন তা পাঠককে তাঁর যুদ্ধ জয়ের রহস্য উদ্ঘাটনে সহায়তা করবে। খালিদ রা. যে সময়ে জন্ম গ্রহণ করেন তখন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সামরিক শিক্ষা তো দূরের কথা, সাধারণ শিক্ষা লাভেরও কোনো সুযোগ ছিলো না। তা সত্ত্বেও তিনি রণকৌশল প্রয়োগের ক্ষেত্রে যে প্রজ্ঞা ও দক্ষতার পরিচয় রেখে গেছেন তা তুলনাহীন। এ গ্রন্থ পাঠ করলে জানা যায়, তিনি প্রজ্ঞা ও দক্ষতার সঙ্গে কতো নিখুঁতভাবে আধুনিক সমরবিদ্যার প্রতিটি কৌশল তাঁর যুদ্ধে প্রয়োগ করেছিলেন। সেদিক থেকে এ গ্রন্থটি অনন্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।