"শান্তা পরিবার" বইয়ের ভেতর থেকে নেয়া: শান্তার বয়স যখন মাত্র এক বছর তখন তার বাবা মারা গিয়েছিলেন। শান্তার বাবা ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরির একজন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন, একবার বয়লার ফেটে ফ্যাক্টরিতে ভয়ংকর একটা একসিডেন্টে একসাথে চারজন মারা গেল— সেই চারজনের একজন ছিলেন শান্তার বাবা। একটি বাচ্চা যখন এত ছােট তখন তার বাবা মারা যাওয়া মােটামুটিভাবে একটা ভয়ংকর ব্যাপার, শান্তা অবশ্য তার কিছুই বুঝতে পারল না। শান্তার বাবা বড় ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন তাই ফ্যাক্টরি থেকে, ইস্যুরেন্স কোম্পানি থেকে শান্তার মা অনেক টাকা-পয়সা পেয়েছিলেন। সবাই তাই শান্তার মা'কে খুব দেখে শুনে রাখল । শান্তার বয়স যখন তিন তখন শান্তার মায়ের খুব একটা খারাপ অসুখ ধরা পড়ল, ব্লাড ক্যান্সার না যেন কী। সেই অসুখে ভুন্থে ভুগে মা যখন মারা গেলেন তখন শান্তার বয়স চার। মায়ের চিকিৎসা করতে গিয়ে সব টাকা-পয়সা খরচ হয়ে গিয়েছিল তাই মা যখন মারা গেলেন তখন শান্তার জন্যে সবাই শুধু মুখে আহা উহু করেই সরে পড়ল, যখন শান্তাকে মানুষ করার। সময় হল তখন কারাে দেখা নেই। যখন সবাইকে ধরে বেঁধে আনা হল তখন বড় চাচা আঁৎকে উঠে বললেন, “আমি কী করে এই মেয়েকে দেখাশােনা করব, আমার এমনিতেই এত বড় ফ্যামিলি।” ছােট চাচা চোখ কপালে তুলে বললেন, "সর্বনাশ! আমার এত ছােট ফ্যামিলি এখানে তাে এডজাস্টই করতে পারবে না!” শান্তার খালারা ভয়ের চোটে শান্তার বাসাতেই আসা ছেড়ে দিলেন । মামাদের সুবিধে হল সবচেয়ে বেশি, সবাই দেশের বাইরে তাই কীভাবে ছােট বাচ্চাদের মানুষ করতে হয় তার ওপর লম্বা লম্বা চিঠি লিখেই খালাস। শেষ পর্যন্ত কোন উপায় দেখে শান্তার সবচেয়ে সাদাসিধে ছােট ফুপুর বাসায় তার জায়গা করে দেওয়া হলাে। কি ঘটলো শান্তার জীবনে এরপর?
বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরী পাঠকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি মূলত এ দেশের একজন বিখ্যাত লেখক, পদার্থবিদ এবং শিক্ষাবিদ। কিশোর সাহিত্য, শিশুতোষ গ্রন্থ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, গণিত বিষয়ক বই এর জন্য খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা বাবা ফয়জুর রহমানের চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলাতেই তিনি পড়াশোনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে পিএইচডি ডিগ্রী অজর্নের উদ্দেশ্যে স্কলারশিপ নিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পিএইচডি সম্পন্ন করে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ ল্যাবেও গবেষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সবসময়ই এ দেশের কিশোর-কিশোরীদের কাছে বিশেষ আবেদন নিয়ে হাজির হয়েছে। কিশোর সাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ক অজস্র গ্রন্থ দিয়ে তিনি আলোকিত করে তুলেছেন এদেশের অগণিত কিশোর-কিশোরীর মনোজগত। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমূহ, যেমন- দীপু নাম্বার টু, আমার বন্ধু রাশেদ, আমি তপু, শান্তা পরিবার, দস্যি ক’জন ইত্যাদি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়। তার বেশ কিছু গল্প পরবর্তীতে নাটক ও চলচ্চিত্র হিসেবে টিভি পর্দায় স্থান করে নিয়েছে। তিনি একজন বিশিষ্ট কলামিস্টও। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডও তাঁর ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমগ্র সকল বইপড়ুয়াকেই আকৃষ্ট করে। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বহুবার পুরষ্কৃত হয়েছেন। বাংলা একাডেমি পুরষ্কার (২০০৪) এবং শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার (২০০৫) সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, কাজী মাহবুবুল্লা জেবুন্নেছা পদক (২০০২), শেলটেক সাহিত্য পদক (২০০৩), ইউরো শিশুসাহিত্য পদকসহ (২০০৪) অগণিত পুরষ্কার অর্জন করেছেন গুণী এই সাহিত্যিক।