বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্যই আওয়ামী লীগের আত্মপ্রকাশ। ত্যাগে অতুলন, নিবেদিতপ্রাণ অগণিত নেতা-কর্মী-সমর্থক এ দলের হাল ধরে রেখেছেন ৭৫ বছর। যাত্রা শুরু ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। জয়েন্ট সেক্রেটারি শেখ মুজিবুর রহমান বয়স কেবলই ২৯ বছর, কারাবন্দি কিন্তু নেতা-কর্মী সবার বিবেচনায় তিনিই নবীন দলের প্রাণপুরুষ। দল গঠনের জন্য তিনি এ ভূখণ্ডের পথে-প্রান্তরে চারণের মতো পরিভ্রমণ করেন। বাঙালির নিজস্ব রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি শুরু থেকেই সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। এ লক্ষ্যে জনগণকে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ করেছেন, দল সংহত করেছেন এবং উপযুক্ত নেতৃত্ব গড়ে তুলেছেন। ১৯৭১ সালে যখন স্বাধীনতার ডাক দিলেন, জনগণ প্রস্তুত হয়েই ছিল যে কোনো ত্যাগের বিনিময়ে লক্ষ্য অর্জনে, দল প্রস্তুত নেতৃত্ব প্রদানে। স্বাধীন রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক নীতি কী হবে, দুঃখী মানুষের মুখে কীভাবে হাসি ফোটানো সম্ভব হবে স্পষ্ট ধারণা ছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা, জাতীয় চারনেতাকে কারাগারের অভ্যন্তরে হত্যা এবং অগণিত নেতা-কর্মী নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরও তারা আদর্শচ্যূৎ হয়নি, পথ হারায়নি। চরম প্রতিকূল সময়ে যখন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ঝড়ের খেয়ার হাল ধরেন, সকলে তাঁর পাশে থাকে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়ে। তিনি শোক-যন্ত্রণা নীরবে সহ্য করে শহর-বন্দর-জনপদে নিয়মিত সফর করেন। দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের একান্ত কাছের মানুষ হয়ে ওঠেন। সাধারণ মানুষের কাছেও পৌঁছে যান। তাঁর দরদী-মানবিক হাতের স্পর্শ মেলে অতি সহজে। বঙ্গবন্ধুকন্যার যোগ্য নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এখন তৃণমূলে আরও বেশি বিস্তৃত ও সংহত, বাংলাদেশ রাষ্ট্রও স্বল্পোন্নত দেশের অবস্থান থেকে উন্নয়নশীল দেশের সারিতে ওঠার সোপানে। সামনে লক্ষ্য স্পষ্ট, উন্নত বিশ্বের মহিমান্বিত কাতারে আসন গ্রহণ। এজন্য ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ যথাযোগ্য ভূমিকা গ্রহণে প্রস্তুত, যেমনটি ঘটেছিল ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়। নিশ্চিত করেই বলতে পারি যে দলটি স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে তারা সফলকাম হবেই। বীর মুুক্তিযোদ্ধা, একুশে পদকপ্রাপ্ত খ্যাতিমান সাংবাদিক এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর প্রতিরোধ সংগ্রামে অগ্রণী অজয় দাশগুপ্ত এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত সাবেক ছাত্রনেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায় ‘আওয়ামী লীগের ৭৫ বছর’ গ্রন্থে দলটির গৌবর, সংকল্প ও আত্মত্যাগের নানা ঘটনা তুলে ধরেছেন। গ্রন্থের পরিসর স্বল্প, কিন্তু ইতিহাসের অমূল্য ভাণ্ডার জ্বল জ্বল করছে আমাদের সামনে। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী শুধু নয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত দলটির বিষয়ে জানতে আগ্রহী সবার জন্যই এ গ্রন্থটি সহায়ক হবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
অজয় দাশগুপ্ত। মুক্তিযােদ্ধা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গৌরবের মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে লড়েছেন। সত্তরের দশকের শুরুতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন প্রকাশিত জনপ্রিয় সাপ্তাহিক ‘জয়ধ্বনি সম্পাদক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি (১৯৭৪-৭৬), জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদ ও রসায়ন বিভাগ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকতা বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক। সাংবাদিকতার পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক বিষয়ে গবেষণা কাজে যুক্ত রয়েছেন। টেলিভিশনেও জনপ্রিয় মুখ।। উল্লেখযােগ্য প্রকাশনা : সাত দশকের হরতাল ও বাংলাদেশের রাজনীতি, একাত্তরের ৭১, একাত্তরের যাত্রী, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড প্রতিবাদের প্রথম বছর (নহ-উল-আলম লেনিনের সঙ্গে যৌথভাবে), সাম্রাজ্যবাদের শৃঙ্খলে বাংলাদেশের অর্থনীতি (মাহবুবজামানের সঙ্গে যৌথভাবে), বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন কৌশল ও হরতাল, বঙ্গবন্ধু ও ছাত্র আন্দোলন, রাজনৈতিক পরিভাষা, অর্থের নীতি অর্থের নৈতিকতা, বাংলাদেশের অর্থনীতি, ব্যবসায় সাংবাদিকতা (রােবায়েত ফেরদৌসের সঙ্গে যৌথভাবে), বাংলাদেশ- বদলে যাওয়া বাস্কেট কেস, বাংলাদেশ পাট, পাটচাষী ও পাটশিল্প, রাজনৈতিক পরিভাষা। সম্পাদনা গ্রন্থ : সংগ্রামী নারী যুগে যুগে (দুই খণ্ড, সেলিনা হােসেনের সঙ্গে যৌথভাবে) ও বিজয়ের স্বপ্ন সােপান। অনুবাদ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সম্মােহনী নেতৃত্ব ও স্বাধীনতার সংগ্রাম।