সারেন্ডার্ড ওয়াইফ জন গ্রে-এর লেখা মেন আর ফ্রম মার্স, উইমেন আর ফ্রম ভিনাস বইটি পড়েছিলাম। এটা আমাকে নারী ও পুরুষের পারস্পরিক যোগাযোগ পদ্ধতির ভিন্নতা ও বৈচিত্র্য সম্পর্কে একটা ধারণা দেয়। তখন কিছুটা উপলব্ধি হয় যে, জীবন সম্পর্কে নারী ও পুরুষের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিগুলোতে কতটা পার্থক্য বিদ্যমান। আমি অন্য নারীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলি এবং বোঝার চেষ্টা করি-তাদের দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার পেছনে কোন বিষয়গুলো সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তখনো জানতাম না যে, এরই মাধ্যমে আমি আত্মসমর্পণের পথে হাঁটি-হাঁটি-পা-পা করে চলতে শুরু করেছি। পরে এটাই হয়েছিল আমাদের দাম্পত্য জীবনে প্রশান্তি তৈরি করা এবং আমার হারানো আত্মমর্যাদা ফিরিয়ে আনার মাধ্যম। আজ আমি একজন আত্মসমর্পণকারী স্ত্রী হিসেবে নিজের পরিচয় দিই। একজন নারী হিসেবে যেরকম দাম্পত্য জীবনের স্বপ্ন আমি দেখেছিলাম, ঠিক সেরকম একটা জীবনই পেতে শুরু করি এরপর থেকে। এই একই ব্যাপার আপনার ক্ষেত্রেও ঘটবে, যদি আপনি এ-বইয়ের মূলনীতিগুলো অনুসরণ করেন। আনপ্রটেক্টেড আমি যেখানে কাজ করি, সেখানে আমরা কিছু বিষয় নিয়ে পড়ে থাকি আর কিছু বিষয় একেবারে এড়িয়ে যাই। শিশুকালে নির্যাতিত হওয়ার সম্ভাবনা জিজ্ঞেস করি ঠিকই, কিন্তু গত সপ্তাহের রিলেশান নিয়ে না। কী খেয়েছ তা জিজ্ঞেস করা হয়; কিন্তু কয়বার গর্ভপাত করেছে, তা জিজ্ঞেস করা যাবে না। বাবা-মায়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমরা চিন্তিত; কিন্তু হার্পিসের বেদনা, অনৈতিকতার বিপদ, আর ক্যারিয়ারবাদী নারীদের জীবনে ঘনিয়ে আসা বন্ধ্যাত্ব নিয়ে সবাই চুপ। আত্মহত্যা প্রতিরোধে আমরা জাগ্রত সৈনিক; কিন্তু স্রষ্টা আর জীবনের চূড়ান্ত অর্থ নিয়ে আলোচনাকে মুখ টিপে থামিয়ে দিই। একচোখা স্বাস্থ্যশিক্ষা' আমাদের ছেলেমেয়েদের ভুল তথ্য জানাচ্ছে। নারীদেরকে বিশ্বাস করানো হয় যে, তারাও পুরুষদের মতো সন্তান নিতে দেরি করতে পারে। বিরক্ত আর ক্ষুব্ধ হয়ে তাই লিখলাম Unprotected এসব ঝামেলায় জড়ানোর ইচ্ছে ছিল না; কিন্তু বইটি যেন আমার দরজায় এসে করাঘাত করতে শুরু করেছিল। এর একেকটি অধ্যায় আমার জীবনের সঙ্গে মিশে গেছে। আমার অফিসে আসা প্রতিটি শিক্ষার্থীর সঙ্গে একটু একটু করে বেড়েছে এই বন্ধন। সময় আমাকে মুখ খুলতে প্ররোচিত করেছে আমাকে, কিন্তু এরই সঙ্গে এসেছে ভয় ও দুশ্চিন্তা। পলিটিক্যালি ইনকারেক্ট হওয়ার জন্য কতটা মূল্য দিতে হবে আমাকে? হয়তো ঝামেলা এড়ানোর মানসে আমি নিজের এসব দৃষ্টিভঙ্গি নিজের কাছেই রেখেছিলাম। কারণ, মুখ খুললেই নানারকম তকমা ছুটে আসবে। তাই বিতর্ক এড়িয়ে চলতে থাকি। ইমেইল বা মন্তব্য এসে যখন বিরক্ত করত, রা করতাম না। কিন্তু এরপর দেখা পেলাম ব্রায়ান এবং স্টেসির, তখন থেকেই আমার সমস্যা শুরু হয়। চুপ থাকা কী করে সম্ভব? তাদের গল্পটা তো ব্যতিক্রম কিছু না। দেশ জুড়ে লাখো তরুণ-তরুণীর জীবন তো এই একই গল্প বলে যাচ্ছে।
সফলতার কান্না আপনি যে বইটি পড়তে যাচ্ছেন, হতে পারে সেটা আপনার জীবন পালটে দেবে। এখানে যেসব তথ্য ও পরিসংখ্যান উপস্থাপন করা হয়েছে, হতে পারে সেগুলো বিপুলভাবে প্রভাব ফেলবে-হয়তো আপনার নিজের, বা আপনার প্রিয় বন্ধুর, বা আপনার মেয়ের কিংবা আপনার বোনের জীবনে। প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার আমি অকাট্য প্রমাণ পাই যে, এই বইটি কারও চিন্তাধারা বদলে দিয়েছে, কারও জীবনে পরিবর্তন ঘটিয়েছে, কারও জীবনের গতিপথ পালটে দিয়েছে। এই বইয়ের পাতায় পাতায় যেসব পরিসংখ্যান এবং বাস্তব গল্প তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলো একত্রে মিলে একটি অত্যন্ত স্পষ্ট মানচিত্র তৈরি করে-যা একজন নারী, তার বয়স ১৮ হোক বা ৩৮, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো আরও বুঝে-শুনে, আরও অনুপ্রেরণার সাথে নেওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারে। ফার্টিলিটি-সংক্রান্ত সাম্প্রতিক তথ্য তাকে কৃত্রিম বন্ধ্যত্ব চিকিৎসার ব্যাপারে আরও পরিষ্কার ধারণা দেবে। বুঝতে সাহায্য করবে ৪২ বছর বয়সে একটি 'মিরাকল বেবি' জন্ম দেওয়া আসলে কতটা বাস্তবসম্মত। ক্যারিয়ারের বিভিন্ন বিকল্প পথ এবং ফ্যামিলি সাপোর্টের সুবিধার ব্যাপারে নতুন সব তথ্য নারীদের বিভিন্ন সুযোগের ব্যাপারে অবগত করবে এবং এর ইতিবাচক প্রভাব নারীদের জীবনে অবাক করার মতো। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, বইটি পড়ার আগের আপনি আর পরের আপনির মধ্যে এক বিস্তর তফাৎ আপনি নিজেই খুঁজে পাবেন।