শিশুরা হলো মানবকাননে ফুটে ওঠা একেকটি অলৌকিক ফুল। প্রত্যেকটি শিশুই পৃথিবীতে জন্মায় বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মনে জাগে নানান রঙিন স্বপ্ন। শিশুরা যত বড় হতে থাকে, তত বড় হতে থাকে তাদের স্বপ্নেরা। তারা ছুঁয়ে দেখতে চায় সেই স্বপ্নের জগত। শিশু আপনার, আমার—তাকে গড়ে তোলা, তার সম্ভাবনাকে বিকশিত করার দায়িত্ব কার? নিশ্চয়ই বলবেন আমার, আমাদের। তা-ই যদি হয়, তবে তাদেরকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলতে যা যা করা দরকার, আমরা তার কতটুকু করেছি বা করছি, তা ভেবে দেখার দরকার আছে। প্রতিটি মানবশিশু একেকটি চারাগাছের মতো। চারাকে যেমন সার-পানি-আলো-বাতাস দিয়ে পুষ্টি জোগাতে হয়, শিশুকেও তেমনি আদবকায়দা, শিক্ষা-দীক্ষা দিয়ে সভ্যতার উপাদান সরবরাহ করতে হয়। আগাছা তুলে না ফেললে, পুষ্টির জোগান না দিলে চারাটি যেমন গাছে পরিণত হতে পারে না, তেমনি আদর-সোহাগ, শিক্ষা-শাসন না পেলে মানবশিশুটিও ‘মানুষ’ হয়ে উঠতে পারে না। এই পুষ্টি সরবরাহ ও শিক্ষা-শাসনের কাজ করতে হয় সযত্নে। পরিচর্যাকারীকে হতে হয় কুশলী ও সতর্ক। কারণ, চারাগাছ ও শিশুর পরিচর্যা এমনই এক নাজুক ব্যাপার যে, সামান্য অবজ্ঞা-অবহেলায় সর্বনাশ ঘটে যেতে পারে—তা কি হতে দেওয়া যায়? একটি শিশুর অন্তর্নিহিত মেধা ও সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশে সাহায্য করার দায়িত্ব কার? শিশুমনের সুকুমারবৃত্তির সুষ্ঠু বিকাশ, প্রকাশ ও চর্চার একটি নিটোল জায়গা দরকার; সে জায়গাটি আজ কোথায়? শিশুরা সবসময় নতুন কিছু জানতে আগ্রহী। তারা কল্পনা করতে ভালোবাসে। এ দেশের শিশু-সাহিত্যিকেরা শিশুদের জন্য স্বপ্ন ও কল্পনার জগৎ কতটুকু সৃষ্টি করেছেন? এ ব্যাপারে শিক্ষক, অভিভাবক এবং গুণীজনেরা কতটুকু সচেতন? এসব বিষয় নিয়েই বইটি রচিত।