পবিত্র গীতা ও গীতার আলোকে জীবন প্রবাহ ভূমিকা সর্বপনিষদ গাব দগ্ধা গোপাল নন্দন পার্থ বৎস্য সূধী ভোক্তা দুগ্ধং গীতামৃত মহৎ। পবিত্র গীতার মাহত্বে বলা হয়েছে যে সকল উপনিষদ হতে নিসৃত রস দহন করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতা নামের অমৃত তুল্য মহৎ জ্ঞান মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন। সেই অমৃত রস আহরণপূর্বক হৃদয় দিয়ে আস্বাদন করা খুবই দূরহ ব্যাপার। একমাত্র ভগবানের অশেষ কৃপা ছাড়া এই রস আস্বাদন করা সম্ভন নহে। কবি অমৃত রায় বিশ্বাস একজন কবি। তিনি তার কবিতায় সমাজের রসাত্বক, ব্যাঙ্গাত্বক, প্রেম, প্রীতি নীতি এবং আদর্শের কথা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে লিখেছেন। কিন্তু তিনি এবার একেবারে ভগবানের মুখনিসৃত বাণী নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং গবেষণা লব্ধ ফল তার এই গ্রন্থে উদগীরণ করেছেন। ভগবানের অত্যন্ত প্রিয় প্রাণী হচ্ছে গরু। এই গরু কিন্তু খাবারের পর নিরবে নিভৃতে সেই খাদ্য হজম করার সুবিধার্থে যাবড় কাটে। কবি অমৃত রায় বিশ্বাস সে রূপেই পবিত্র গীতা গ্রন্থ পাঠ করে তা অনুধাবন করার লক্ষ্যে ভগবানের নিজ মুখনিসৃত বাণী নিয়ে নিরবে নিভৃতে সাধনা করেছেন। তার কবি স্বত্তার মননে এই গীতার বাণী অনুরণিত হতে হতে এই অতীব সুন্দর গ্রন্থের উৎপত্তি হয়েছে। এই গ্রন্থখানি আমি নিবীড়ভাবে পড়েছি এবং উপলব্ধি করেছি। তিনি আত্মার অবিনশ্বরতার কথা, কর্মের দ্বারা জ্ঞানকে পরিপুর্ণভাবে রূপায়িত করে তা অভ্যাসে রূপান্তরের কথা বলেছেন। তিনি জ্ঞানের মাঝে নিহিত বিজ্ঞানের দ্বারা আত্ম উপলব্ধীপূর্বক অসীম ভক্তিতে নিজেকে ভগবানের পাদপদ্মে সমর্পণের কথা বার বার বলেছেন। এসব বিষয়ে পবিত্র গীতায় কোথায় কোন অধ্যায়ে কি বলা হয়েছে তার খুটি নাটি বিষয়গুলি তিনি গীতারূপ মহাসমুদ্র হতে তুলে এনেছেন। ভগবান তার রূপের বর্ণনা শেষে তা আবার ভক্ত অর্জুনকে দেখিয়েছেন। ভগবান দেখিয়েছেন তার ভক্তিপূর্ণভাবে সাধু সঙ্গের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করাই একমাত্র পথ ও পাথেয়। আমাদের সমাজের বৈষ্ণবগণ সেটাই করে থাকেন। এই গ্রন্থের লেখক আমার জেষ্ঠ্য ভ্রাতা। তাঁকে দেখতাম ছোটবেলা হতেই গীতা পাঠ এবং গীতা নিয়ে তর্জমা করতে। আমাদের বাড়ির অধিকাংশ মানুষগুলিই শিক্ষক হওয়ায় অনেক কিছু নিয়ে পারিবারিক আড্ডায় আমরা অংশ নিয়েছি। অনেক আড্ডার মাঝে গীতা নিয়ে ছিল দাদার আলাদা অনুভূতি। আমার অরেকজন কাকীমা শ্রীমতি ভারতী রানী বিশ্বাসের কথা না বললেই নয়। তিনিও একজন গীতা বিশারদ। আমার বিশ্বাস দাদার এই লেখায় ভারতী কাকিমার অবদান অনস্বাকার্য।