হাদীসে এসেছে সূরা ফাতিহা ও সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের মতো কিছু অন্য কোনো নবী-রাসুলকে দেওয়া হয়নি। আরেক হাদীসে এসেছে সূরা ফাতিহার মতো এমনকিছু তাওরাত, ইঞ্জিল এমনকি কুরআনেও দেওয়া হয়নি। তাহলে এর গুরুত্ব নিশ্চয় তুলনাহীন ও মহাবিস্ময়কর হবার কথা। কিন্তু এই অতুলনীয় বিস্ময় আমরা প্রচলতি কোনো তাফসিরের কিতাবে পাচ্ছি না যা পড়ে আমরা মহাবিস্ময়কর অনুভূতির শিহরণ পাবো। এখানেই তাফসির ও বাস্তব জীবনের আলোকে তাদাব্বুরের মধ্যকার ফারাক। আল্লাহর কালামের বিস্ময় তখন ধরা দেয় যখন আমরা একে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে গভীর চিন্তাশীলতার সাথে ভাববো। একেই বলে তাদাব্বুর। এর সাথেই হেদায়াত জড়িত বলে আল্লাহ কুরআনে উল্লেখ করেছেন [আন নিসা : ৮২]। আল্লাহর কালামের বিস্ময় ফুটে ওঠে এই তাদাব্বুরের গভীর চিন্তাশীলতার প্রজ্জ্বলিত শিখায়। সূরা ফাতিহা এক মহাবিস্ময়। এর প্রতিটি শব্দে বিস্ময়ের একেকটি মহাসমুদ্র উন্মোচিত হয়। এই মহাসমুদ্র হেদায়াতের একেকটি নূর হয়ে আমাদের চিন্তাশীলতায় বিস্মিত হয়ে ধরা দেয়। এর প্রতিটি শব্দ, বাক্য, বিষয়, অলঙ্কার, ভারসাম্য, মাত্রা সবই একেকটি বিস্ময়কর মুজিযা, যা প্রতিটি মানবমনে এক মহান রবের প্রতি মাথা নুইয়ে পড়তে বাধ্য করে, বাধ্য করে নিজেকে এমন রবের ভালোবাসার দাসত্বে আবদ্ধ করতে। এই রব (মালিক) এমন মালিক যা এই দুনিয়ার যেকোনো মালিকের তুলনায় অতুলনীয় বিস্ময় ও ভালোবাসা ধারণ করে। আমরা এই অতুলনীয় রবের সামনে স্বেচ্ছায় দাসত্ব মেনে নেই যা দুনিয়ার যাবতীয় দাসত্বের সংজ্ঞাকেই পাল্টে দেয়। এই রব, এই দাসত্ব, এই হেদায়াত; এসবের মাঝে রয়েছে আরো বেশ বিস্ময়কর উপলব্ধির উপাদান। সেসব দেখাতে উস্তাদ নোমান আলী খান প্রবেশ করেছেন বিস্ময়ে ভরা সূরা ফাতিহার প্রতিটি শব্দ ও বাক্যের একেকটি মহাসমুদ্র উন্মোচন করতে। যারা উস্তাদের "সূরা আর-রাহমানের গভীরে" এই তাদাব্বুরের কিতাবটি পড়েছেন, তারা নিশ্চয় জানেন আল্লাহর কালামের তাদাব্বুর কতোটা গভীর, সেখানে হেদায়াতের নূর কতোটা গভীরে লুকিয়ে আছে! ভাষার অলংকারও কীভাবে আল্লাহর কালামের আশ্চর্য বুননের সামনে থমকে দাঁড়ায়! সুবহানাল্লাহ! এটা নিশ্চিত যে এই তাদাব্বুর ও নাজম আল-কুরআনের ধাচে বর্ণিত আল্লাহর কালামের এমন আশ্চর্য বই বাংলাভাষায় আর হয়নি। সূরা ফাতিহার পরতে পরতেও এমন আশ্চর্য বিষয়াবলি বর্ণিত হয়েছে।
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন লেখক এবং ইসলামি বক্তা নোমান আলী খান এর বই সমূহ ধর্মীয় যুক্তিতর্কের জন্য মুসলিমদের নিকট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তার ‘ডিভাইন স্পিচ: এক্সপ্লোরিং কুরআন অ্যাজ লিটারেচার’ বইটি মুসলিম বিশ্বে বেশ আলোড়ন তোলা একটি বই। এ বই তাকে লেখক এবং ধর্মীয় যুক্তিবিদ হিসেবেও খ্যাতি এনে দিয়েছে। বর্তমানে তিনি ‘দ্য বাইয়্যিনাহ ইন্সটিটিউট ফর অ্যারাবিক অ্যান্ড কুর'আনিক স্টাডিজ’ এর সিইও এবং প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৬ সালে তিনি এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। আমেরিকান মুসলিদের নিকট তুমুল জনপ্রিয় এ বক্তা তার ইসলামিক জ্ঞান এবং যুক্তি-তর্কের দ্বারা মুসলিম বিশ্বের অন্যতম পরিচিত মুখে পরিণত হয়েছেন। ইসলামিক ব্যক্তিত্বদের জীবনীভিত্তিক ‘দ্য ফাইভ হান্ড্রেড মোস্ট ইনফ্লুয়েনশিয়াল মুসলিমস’ এর তৃতীয় সংস্করণে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিমদের একজন হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। নোমান আলী খান ১৯৭৮ সালে পূর্ব জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সেসময় পাকিস্তানি কূটনীতিক হিসেবে জার্মানিতে কর্মরত ছিলেন। বাবা-মা উভয়েই পাকিস্তানি হলেও নোমানের পাকিস্তানে বেশি দিন থাকা হয়নি। বাবার কর্মস্থল পরিবর্তনের কল্যাণে সৌদি আরবে ৬ বছর বসবাস করার পর আমেরিকায় চলে আসেন নোমান। এরপর থেকে আমেরিকাতেই থাকছেন এই ধর্মীয় বক্তা। ধর্মীয় শিক্ষায় তার হাতেখড়ি হয়েছিল সৌদি আরবেই। এরপর আমেরিকাতেই তিনি চালিয়ে গেছেন ক্লাসিক্যাল আরবি শিক্ষা। বর্তমানে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাসে বসবাস করছেন তিনি। নোমান আলী খান বাংলা বই লেখেননি, তথাপি তার ‘ডিভাইন স্পিচ’ এবং ‘রিভাইভ ইয়োর হার্ট’ সহ বেশ কিছু বই বাংলায় অনূদিত হয়েছে। এছাড়াও, ‘প্রশান্তির খোঁজে’ এবং ‘বন্ধন’ বইগুলোও রয়েছে নোমান আলী খান এর বই সমগ্রতে।