নিঃসঙ্গতা বিশেষ করে প্রবাসী জীবনে ভারী বোঝার মতো একটি নীপিড়ক যন্ত্রণা, যা অনেককে প্রিয়জনের উষ্ণতার আকাঙ্ক্ষায় তীব্রভাবে আকুল করে তুলে। কিন্তু দূরত্ব এবং এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতার কঠোর বাস্তবতা তৃতীয় বিশ্বের অনেকের ক্ষেত্রেই এই আকুলতা অগ্রাহ্য হয়। গোবিন্দ প্রসাদ মাইনালি, প্রবাস-জীবনের একাকীত্ব আর জাপানের লোভনীয় জাকজমকের স্রোতে আটকা পড়ে, নেপালে ফেলে আসা প্রিয়-স্ত্রী রাধার কথা বিষ্মৃত হন। তিনি একাকীত্বের কষ্টে উষ্ণতা পেতে, ওয়াতানাবে নামের একজন জাপানি নারীকে বাহুতে টেনে নিলে রাধার প্রাপ্যতা প্রবাসী রোমাঞ্চের ঘূর্ণিতে পদদলিত হতে শুরু হয়। জাপানি সংস্কৃতিতে এটাকে নষ্টামী বলা উপায় না থাকলেও, মাইনালির ভাগ্যের মোড়কে অন্যভাবে কিছু লেখা হয়ে যায়। ওয়াতানাবে মর্মান্তিকভাবে খুন হন। মাইনালির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। সহস্রবার জিজ্ঞাসাবাদেও ওয়াতানাবে’র খুনের দায় মাইনালি অস্বীকার করেন। তাহলে প্রকৃত খুনি কে ছিলেন? জাপানে কাছ-থেকে-দেখা ওয়াতানাবে’র এ হত্যার কাহিনিটির কথক চরিত্র, ডিএনএ-ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ড. রায়হানকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল। তিনি দেশে ফেরার অব্যহতি-আগে খবর পান, দৃষ্টি নামের একটি যুবতী মেয়ে ধর্ষণ এবং নৃশংস হত্যার শিকার হয়েছে। তিনি দেশে ফিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করতো-না করতেই চারদিকের অন্যায়-রূঢ়তা তার মস্তিষ্ককে কাফনের মতো স্তব্ধ করে দেয়। ইলা, নীলা এবং শিলা সদ্য ফিরে আসা ড. রায়হানের কাছে ছুটে যায়, ‘দৃষ্টির হত্যার পেছনের সত্যটি উন্মোচন করতে আপনাকে পাশে চাই। স্যার, আমাদেরকে আলোর পথ দেখান। তিনি সরাসরি সহযোগিতা করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরিবর্তে, ওয়াতানাবে’র হত্যাকান্ডের ক্লু অনুসন্ধানের কাহিনীটি ইলা, নীলা এবং শিলাকে তিনি শুনাতে থাকেন, বলেন, ‘আমি একজন একাডেমিশিয়ান। আমার আলোর পথ দেখানোর উপায় এটাই। ওয়াতানাবে’র কাহিনি শুনে তোমরাই সিদ্ধান্ত নিবে, দৃষ্টির ধর্ষক এবং হত্যাকারীকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব কিনা? ড. রায়হানের ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় নামতেই ওদের রিকশা একটি সিএনজি কর্তৃক ইচ্ছেকৃত দুর্ঘনার শিকার হয়। সিএনজি থেকে ইস্রাফিল, আবু জেহেল এবং নমরুদ খাঁ নামের তিন অদ্ভুত নামের-মানুষ বের হয়ে শাসিয়ে বলে ‘আপনারা যা করতে চাচ্ছেন তা না থামালে দৃষ্টির ভাগ্য বরণ করতে হবে। বাসায় ফিরলে রাতেই বাড়ীওয়ালা টেলিফোনে উচ্ছেদের হুমকি দেন, ‘আমার বাসা থেকে তোমরা চলে যাও! অঁজপাড়াগাঁয়ে কে খুন হলো, সেটা নিয়ে তোমরা ঢাকা শহরে উচ্ছৃঙ্খল নাচানাচি শুরু করছো, বিচার চাই! অপমানের এই ক্লেদোক্তি শুনে ইলা, নীলা এবং শিলার মধ্যে ঝাঁঝালো আগুন জ্বলে উঠে, ‘আমরা নৈতিকভাবে ভালো মানুষের সাথে বিতর্ক করতে আপত্তি করি না! কিন্তু শূকর আর হায়েনার সাথে কাদায় গড়াগড়ি দিতে খুবই অপছন্দ করি! আমরা এই বাসা ছাড়বো! একটি প্রাণবন্ত নির্দয়তার প্রতিকৃতিতে আঁকা ওয়াতানাবে’র গল্পটি, একটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করে, ইলা, নীলা এবং শিলার মধ্যে বিপ্লব আর চিন্তার একটি শিখা প্রজ্বলিত করে দিয়েছিল। চিন্তার সেই শিখা নিয়েই, এই ‘ব্যাক স্টেজ ইন দা সিন্ড্রেলা স্টোরি’ গল্পটি।