উনিশ শতকের নব্বইয়ের দশকে প্রকৃত বাংলা ছোটোগল্পের সূচনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে। পরবর্তী সময়ে বাঁক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যে অনেক গল্পকারের আবির্ভাব ঘটেছে। শফিক নহোর একুশ শতকের শূন্য দশকের একজন প্রতিশ্রুতিশীল কবি ও গল্পকার। কসুর তাঁর তৃতীয় গল্পগ্রন্থ। ১৭টি গল্পের সন্নিবেশ ঘটেছে গ্রন্থটিতে। কসুর গল্পগুলি পড়ার পরে আমার দুটি বিষয় মনে হয়েছে- এক. গল্পে সাধারণ মানুষ জায়গা করে নিয়েছে; দুই. বহিঃজীবনের গল্প অনেকখানি চুকিয়ে গল্প হয়ে উঠেছে অন্তর্মুখী। গল্পকার হিসেবে শফিক নহোরের স্বার্থকতা এখানেই। শফিক নহোর নদী বিধৌত পাবনার নাজিরগঞ্জের মানুষ। তাঁর শৈশব এবং কৈশোরের দিনগুলি কাটে পদ্মার পাড়ে। গ্রামের মানুষের সঙ্গে শফিক নহোরের নাড়ির যোগ। ফলে গ্রাম-বাংলার সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম তাঁর লেখার মুখ্য বিষয়। এই মানুষদের তিনি চিত্রিতও করেছেন অত্যন্ত দরদের সঙ্গে তার বিভিন্ন গল্পে। মানুষের প্রেম ও দুঃখ, সুখ ও সংগ্রাম এবং জীবন অতিক্রমনের সমস্যা ও জটিলতা আর সেই সমস্যা জটিলতার ঘূর্ণাবর্ত থেকে উত্তরণের একক অথবা যৌথ প্রচেষ্টা তাঁর কলমে আশ্চর্য মমতায় রূপায়িত হয়েছে। কসুর গ্রন্থের প্রায় প্রতিটি গল্পে তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে লিখে গেছেন সেই একই ধারায়, সাধারণ মানুষ এবং তাদের সংগ্রাম ও জীবন নিয়ে। সমসাময়িক গল্পপাঠকদের তৃষ্ণা মেটাতে সক্ষম হবে শফিক নহোরের প্রতিটি গল্প। তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থের ন্যায় ‘কসুর’ও বহুল কাটতি প্রত্যাশা করি। জয়তু শফিক নহোর, জয়তু ‘কসুর’।
১১ নভেম্বর ১৯৮৬ সালে পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের নওয়াগ্রামে এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা- মো. আব্দুল মাজেদ শেখ, মাতা- হামেদা খাতুন। তিনি সাত বোন ও পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট। পারিবারিকভাবে সুমি খাতুনকে ২০১০ সালে বিবাহ করেন। তাদের দুই কন্যাসন্তান শেখ সাহেরা ইসলাম লামহা ও শেখ আরবী জান্নাত। বর্তমানে নাসির গ্লাসওয়্যার অ্যান্ড টিউব ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের আইটি বিভাগে কর্মরত আছেন তিনি। শফিক নহোর এ সময়ের জনপ্রিয় একজন গল্পকার হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। বিভিন্ন সময় লেখকের লেখা গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ হচ্ছে। প্রথম গল্পগ্রন্থ মায়াকুসুম ব্যাপক জনপ্রিয়তার পর এ বছর আসছে তার নতুন বই মিনুফুলের ঘ্রাণ। বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা ও অনলাইন সৃজনশীল ওয়েব ম্যাগগুলোতে নিয়মিত লিখছেন। বর্তমানে তিনি সৃজনশীল ওয়েব ম্যাগ কাব্যশীলনের সাব-এডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া তিনি টিভি নাটকে অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত আছেন। লিখছেন টিভি নাটক ও গান। ব্যক্তিগত জীবনে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আছেন। এছাড়া তিনি ‘আমাদের সুজানগর’ ওয়েব ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখছেন।