দিগ্বিজয়ী বীর সম্রাট নেপোলিয়ন গ্যোতের অ্যাপোলো দেবতার মতো কান্তিমান মুখমণ্ডলের দিকে তাকিয়ে অপূর্ব বিস্ময়ভরে একবার উচ্চারণ করেছিলেন, 'আ-হা দেখো, একটা মানুষের মতো মানুষ!' শুধু নেপোলিয়ন কেন, গ্যোতের জীবনাবসানের পরেও যাঁরা বীর, যাঁরা জ্ঞানী, যাঁরা শ্রেষ্ঠ, মহৎ তাঁদের অনেকেই এই বিরাট জীবনের প্রতি শ্রদ্ধামিশ্রিত বিস্ময়ে, গরিমামণ্ডিত মস্তক অবনত করেছেন। বিসমার্ক, কার্লাইল, হেগেল, শিলার, বেঠোফেন থেকে শুরু করে কার্ল মার্কস, ফ্রেডারিক এঙ্গেলস, পুশকিন, লেনিন, প্লেখানভ, জওহরলাল নেহরু- এমনি অতিকায় মানবদের অনেকেই গ্যোতে-জীবনকে অনুপ্রেরণা এবং উপলব্ধির অমর উৎসস্থল হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং অগ্রজ হিসেবে তাঁকে মান্য করেছেন। সাহিত্যসাধনা ও মননচর্চার যে-ধারাটি তিনি চালু করেছিলেন, তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিক কালের বেনেদিত্তো ক্রোচে, আলবার্ট সোয়াইৎজার, টমাস মান থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পর্যন্ত সকলে এই একই ধারা অনুসরণ করে গেছেন। কতেক বিচারশীল ইউরোপীয় পণ্ডিত মাত্র কয়েক বছর আগে প্রয়াত অস্তিত্ববাদী ফরাসি দার্শনিক জাঁ পল সাত্রকেও গ্যোতের উত্তরসূরি হিসেবে চিহ্নিত করতে একটুও দ্বিধান্বিত হননি। তাঁর চিন্তাধারার গতিবেগ এখন পর্যন্ত বিশ্বের মননশীল মানুষের মনের গভীরে ঝঙ্কৃত হচ্ছে।
তিনি ছিলেন একজন জার্মান কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, কূটনীতিবিদ ও প্রশাসনিক। তাঁর সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে চারটি উপন্যাস, মহাকাব্য ও গীতিকাব্য, গদ্য ও গদ্যকাব্য, নাটক, স্মৃতিকথা, একটি আত্মজীবনী, সাহিত্যিক ও নন্দনতাত্ত্বিক সমালোচনা এবং উদ্ভিদবিদ্যা, শারীরবিদ্যা ও রং বিষয়ক রচনা। এর পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য সাহিত্যিক ও বৈজ্ঞানিক খণ্ডরচনা, ১০ সহস্রাধিক চিঠি এবং প্রায় ৩ হাজার চিত্রকর্ম। তাঁকে আধুনিক যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ জার্মান সাহিত্যিক বিবেচনা করা হয়।