মানুষ আনন্দ চায়। মানুষ হাসতে চায়। সব সময় গভীর চিন্তায় ডুবে থাকা, কাজে ডুবে থাকা মানুষের জন্য অসম্ভব, তেমনি অসম্ভব সব সময় গুরু-গম্ভিব কিছু পাঠ করা। আনন্দের জন্য মানুষ নাটক, সিনেমা উপভোগ করে, গান শোনে। পাঠের ভেতর আনন্দ পাবার জন্য পাঠকরা রম্যসাহিত্য পড়তে চায়। বাংলা সাহিত্যে খ্যাতিমান রম্যলেখদের স্মরণ করতে গেলেই প্রথমে মনে আসে সৈয়দ মুজতবা আলীর নাম। শৈশব থেকেই আমরা তাঁকে পড়ছি। তাঁর লেখা পড়তে গেলে মনে হয় পৃথিবীতে দুঃখ, হতাশা বলে কিছু নেই। সর্বত্রই ছড়িয়ে আছে শুধু আনন্দ, হাসি। দুঃখে-বিষাদের মধ্য থেকেও তিনি রস টেনে বের করেছেন। আমরা মনে করতে পারি ‘পন্ডিত মশাই’ গল্পটার কথা। গল্পটায় কিন্তু তৎকালীন সমাজের খুবই মর্মান্তিক, অমানবিক দিক ফুটিয়ে তুলেছেন। কিন্তু রসে টইটম্বর। আনন্দের কোনো কমতি নেই। তাঁর চাচা কাহিনী, টুনিমেম,ময়ূরকন্ঠী এবং ভ্রমণ কাহিনীগুলোতে আমরা অপার রস আস্বাদন করেছি। এ ছাড়াও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, সাগরময় ঘোষ, আবুল মনসুর আহমেদ, নুরুল মোমেন, কাজী দীন মোহাম্মদ, মোহাম্মদ আব্দুল হাই, কালীপ্রসন্ন সিংহ, আতাউর রহমান এঁরা বাংলা ভাষার রম্য সাহিত্যের ভান্ডারকে অনেক সমৃদ্ধ করেছেন। বর্তমানেও বাংলাসাহিত্যে বিশেষ করে বাংলাদেশে অনেকেই ভাল রম্যগল্প লিখছেন। বিশ্বসাহিত্যে জেরোম কে জোরোম এবং সমারসেট মম আমাদেরকে অনেক আনন্দ দিয়েছেন। যাহোক, তারপরও বলবো বাংলা সাহিত্যে বতর্মানে রম্যসাহিত্য যতটা হবার ততটা হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে রম্যসাহিত্য কিছুটা অবহেলা পাচ্ছে প্রকাশকদের কাছ থেকে। রম্য লেখকগণ যথাযথ মূল্যায়ন পাচ্ছেন না। এরূপ প্রতিকূলতার মাঝেও আমরা কেউ কেউ রম্যসাহিত্য করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। লেখার মাধ্যমে মানুষকে হাসানো, মানুষকে আনন্দ দেয়া যে কতটা কঠিন কাজ যা যিনি করেন তিনিই শুধু বোঝেন। তবে রম্যসাহিত্য বলতে আমরা যদি শুধু হাসি-আনন্দ-কৌতুক বুঝে থাকি তাহলে আমাদের বোঝার মধ্যে বড় ভুল থেকে যাবে। কৌতুকের ভেতর দিয়ে, সমাজের, রাষ্ট্রের নানাবিধ অসঙ্গতি, মানুষের চরিত্রের, আচরণের নানা ভুলক্রুটি তুলে ধরা হয়। হাস্যরসের ভেতর দিয়ে ধর্মান্ধ, প্রতিক্রিয়াশীল, নেতা, রাষ্ট্রপরিচালক অনেকের বুকের ভেতরই হুল ফুটিয়ে দেয়া হয়। বিভিন্ন পত্রপত্রিকার রম্যবিভাগ গুলোতে আমি দীর্ঘদিন ধরে রম্যগল্প লিখছি। ২০২৩ সাথে আমার প্রথম রম্যগল্পের বই ‘ঘুমই সফলতার চাবিকাঠি’ প্রকাশ হয় প্রিয় বাংলা প্রকাশনা থেকে। বইটি উৎসর্গ করেছিলাম বর্তমান সময়ের খুবই পরিচিত রম্য লেখক শফিক হাসানকে। মূলত তাঁরই অনুপ্রেরণায় আমার রম্যগল্প লেখা শুরু। আমার প্রথম রম্যগল্পের বইটি যথেষ্ট পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে। পাঠকদের কাছ থেকে ভাল সাড়া পেয়েছি। সেই সূত্র ধরেই আমি আরেকটি রম্যগল্পের পাণ্ডুলিপি প্রস্তত করতে সাহস করি। আমার বর্তমান পাণ্ডুলিপিতে ১৮টি রম্যগল্প আছে। গল্পগুলোর সবই দেশের প্রথম শ্রেণির পত্রিকার রম্য বিভাগে প্রকাশ হয়েছে। আমি আশা রাখি, আমার বর্তমান বইটিও পাঠকদের হাসাতে পারবে, আনন্দ দিতে পারবে, সেই সাথে যথাস্থানে হুল ফোটাতে পারবে। এই দুঃখভরা কর্মময় পৃথিবীতে কেউ যদি আমার লেখার কোনো একটা লাইন পড়ে ফিক করে হেসে ফেলে এর চেয়ে সার্থকতা আর কিছু নেই একজন লেখকের জন্য।
আবুল কালাম আজাদের শৈশব কেটেছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের কৌড়ী গ্রামে। পল্লী প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য তার মধ্যে সাহিত্যের বীজ বুনে দেয়। শৈশব থেকেই লেখালেখি শুরু। এ পর্যন্ত চারবার মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন ২০০৮, ২০০৯, ২০১০ ও ২০১২ সালে। মীনা কার্টুনের গল্প লেখা এবং রুম টু রিড আয়ােজিত নন-ফ্যান্টাসি গল্প লেখার কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। প্রকাশিত বই ক্ষয়, নক্ষত্রের পানে, ভেলু মামার কঙ্কাল পাঠ, বন্ধু পাওয়া, বন্টু মামা ও একটি শালিক পাখি, সেকেন্ড মিশন সাকসেসফুল, পরশু মাহাবুব ভাইয়ের বিয়ে, শুভ্র চলে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকায় রচিত উপন্যাস ‘সােনাডাঙা স্কুলে মুক্তিযুদ্ধ’ পাঠকের মন যােগাতে ও জাগাতে সক্ষম হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। লেখক বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়ােজিত আছেন। লেখালেখির পাশাপাশি আবৃত্তি ও ছবি আঁকেন।