বিদগ্ধ পর্যালোচকেরা এ গ্রন্থটিকে মৌলবাদ বিরোধী সংগ্রামের তাত্ত্বিক হাতিয়াররূপে চিহ্নিত করেছেন। এ গ্রন্থের পটভূমি এবং প্রতিপ্রেরণা ছিল ভারতে মৌলবাদী রাজনীতির অভ্যুত্থান। রামায়ণ ও মহাভারত-এর মহাকাব্যিক কল্পকাহিনিকে হাতিয়ার করেই আরম্ভ হয়েছিল মৌলবাদী রাজনীতির তাণ্ডব। অনেক প্রতিবাদ সংগ্রামের পরও মৌলবাদী রাজনীতি দুর্বল হবার পরিবর্তে আরও শক্তি সংগ্রহ করেছে এবং বলদর্পে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এমন আশঙ্কাও আজ আর সম্পূর্ণ অমূলক নয় যে, তথাকথিত রাম ও কৃষ্ণ অবতার, অযোধ্যা-বারাণসী-মথুরার মন্দির-মসজিদ, আর গো-হত্যা নিয়ে মধ্যযুগীয় আসুরিক রাজনীতির মাধ্যমে মৌলবাদী শক্তিগুলো সত্যিই রাষ্ট্রশক্তি অধিকার করে ফেলতে পারে। অতএব মৌলবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলবার ঐতিহাসিক প্রয়োজন আজ আগের চেয়ে বেশি। রামায়ণ ও মহাভারত-এর সমাজবৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের সাহায্যে মৌলবাদ বিরোধী গণচেতনা প্রসারের প্রয়োজনও তাই জরুরি। সে লক্ষ্য সামনে রেখেই অনেক নতুন তথ্য যোগ করে প্রকাশিত হলো নতুন সংস্করণ।
লেখক অকাট্য তথ্যপ্রমাণ দিয়ে দেখিয়েছেন যে, মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারত প্রথমে ছিল দুই রাজ পরিবারের যুদ্ধভিত্তিক ধর্মহীন কল্পকাহিনি মাত্র। সুঙ্গ থেকে গুপ্ত যুগে জাতপাত ভিত্তিক ব্রাহ্মণ্য ধর্মীয় শ্রেণিশোষণ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বিপুল পরিমাণে ধর্মীয় সংযোজনের মাধ্যমে, বিশেষত অবতারতত্ত্ব রচনা ও প্রক্ষেপ করে, শাসক শ্রেণি দুই মহাকাব্যকে রাষ্ট্রশক্তির পৃষ্ঠবলে ধর্মগ্রন্থের রূপ দেয়। এ ঐতিহাসিক সত্যের আলোকে লেখক এদেশে বর্তমানকালে তথাকথিত রাম অবতারকে হাতিয়ার করে মৌলবাদী রাজনীতির শ্রেণিচরিত্র ও অপকৌশলের স্বরূপ উদ্ঘাটিত করেছেন।