বাংলা সাহিত্যে ‘বিধবা’ চরিত্রের একটা বিশেষ ভূমিকা আছে। বস্তুত এ ভূমিকাটি পাশ্চাত্য ভাবধারার প্রত্যক্ষ ফল। বিশেষ করে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের সব কটি শাখা—প্রশাখা পাশ্চাত্য সভ্যতা ও ভাবধারাপুষ্ট বাঙালিমানসের নবজাগরণের ফল। ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঙালি মানস ও মননশীলতায় পাশ্চাত্য ব্যক্তিস্বাতন্ত্রে্যর এই জয়গান ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে কুসংস্কারমুক্ত বাঙালি মানস যে সমস্ত সামাজিক সমস্যাকে সাহিত্যে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছে, ‘বিধবা বিবাহ’ প্রসঙ্গটি এগুলোরই অন্যতম প্রধান। ফরাসি বিপ্লবোত্তর পাশ্চাত্য সভ্যতা ও শিল্প বিপ্লবের ঢেউ এ দেশের শিক্ষিত সমাজের মনে যে ভাব—আন্দোলনের সৃষ্টি করে, তার ফলে একদিকে কুসংস্কারাবদ্ধ প্রাচীনেরা যেমন হায় হায় শুরু করলেন “গেল, গেল, সব গেল; জাতি, ধর্ম, শিক্ষা, লোকাচার, দেশাচার সব কিছুই শেষ হলো।” অপরদিকে তেমনি পাশ্চাত্যের গুণমুগ্ধ—রা প্রচার করতে শুরু করলেন “মানুষের মতো বাঁচতে হলে এগুলোকে ছাড়তেই হবে। বিলাতের লোকেরা সভ্য, যে—আচার—ব্যবহারের ফলে তারা সভ্যতার মানদণ্ডে নিজেদের ভারি করেছে, সেসব আচার—ব্যবহার, রীতি—নীতি আমাদেরও গ্রহণ করতে হবে, নইলে অজ্ঞানতার অন্ধকারে ডুবে যেতে হবে সবাইকে।” বস্তুত সমাজের এই বিক্ষুব্ধ দ্বন্দ্ব ও আলোড়নকে নিয়েই এ—যুগের বাংলা সাহিত্যের ক্রমবিকাশ। ভাব, ভাষা, আঙ্গিক, কলাকৌশল প্রভৃতি সব দিকেই বাংলা সাহিত্যের এ ক্রমবিকাশ মহৎ সাহিত্য সৃষ্টির দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এ সমাজ—ব্যবস্থার বিধবারা হলেন অন্যতম প্রধান বিষয়।
খন্দকার রেজাউল করিম শিক্ষক, গবেষক, লেখক। তাঁর শিক্ষতা জীবনের শুরু ১৯৭৫ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৭৮ সালে উচ্চশিক্ষর জন্য আমেরিকা যান। ১৯৮৩ সালে ইউনিভার্সিটি অব অরিগন থেকে পদার্থবিদ্যায় ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপরে ৩০ বছর কাটিয়েছেন আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষনা ও শিক্ষতার কাজে। বর্তমানে তিনি আমেরিকার ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ইমিরেটাস প্রফেসর। ড. করিম গবেষনার কাজে জড়িত ছিলেন নাসা, মার্কিন জাতীয় বিজ্ঞান সংস্থা, মার্কিন এনার্জি সংস্থা, ন্যাটো, টোকোমাক ফিউশন টেস্ট রিয়্যাক্টর এবং আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান প্রকল্পে। তাঁর ৮০টি গবেষনা-প্রবন্ধ রয়েছে। এর বাইরে লিখেছেন দুটি বই : Quantum Nursery Rhymes ও কোয়ান্টাম রাজ্যে ডালিম কুমার।