প্রথম প্রকাশের বছর কুড়ি পর আবার প্রকাশিত হলো অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতার বই ”কলকাতার খোয়াব”। দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকায় কবি লিখছেন : “প্রকাশের কুড়ি বছর পর বইটি নতুন করে পড়তে বসে দেখি লেখক হিসেবে প্রবেশের আর কোনো পথই প্রায় অবশিষ্ট নেই। দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া লিখনের স্মৃতিও সব ঝাপসা।এ বেশ এক মুক্তাবস্থা। বিশুদ্ধ পাঠক হিসেবে নিজগ্রন্থে প্রবেশ করবার,সূক্ষ্ম শরীরে স্থূলজগতে বিচরণ করবার সুযোগ। সাক্ষীভাবে। দেখি, অনেক লেখাই আমাকে স্পর্শ করছে না আর। ফুটি ফুটি করেও ফোটেনি এমন সব ফুল, অসমাপ্ত — কখনো শুধু একটা কাঠামো, কোথাও একটা ভঙ্গীমাত্র। বিমূর্ত কোনো ভাবোচ্ছ্বাস হয়তো আরো একটু মূর্ত হতে চাইছে। চাইছে চালচিত্র — হৃদয়ের জ্যান্ত পটভূমি। পাতা জোড়া তাদের খর্বিত অস্তিত্বে সেই হয়ে উঠতে চাওয়ার আকুতি। অন্যদিকে এ বইয়ের লেখককে আমি ততটাই ঘনিষ্ঠ চিনি, যতটা নিজেকে। জানি তার প্রাণের স্পন্দন, স্বপ্নতরঙ্গের দৈর্ঘ্য। তাই এই পাঠ আমাকে নিয়ে চললো ব্যক্তিগত তবু ব্যক্তিগত নয় এমন এক সময়ে। সেই সময়কে যে দৃষ্টিতে ফিরে দেখলাম তা আমাকে প্রতিষ্ঠা করলো এক নাটকীয় সত্তায় যে কিনা এই লেখাগুলির ‘আমি’। প্রদত্ত কাব্যপ্রস্তাবনার অন্তর্গত বাস্তবতাতে সেই ‘আমি’ কেমন ক্রিয়া করবে তার শক্তিক্ষেত্রের জ্যান্ত সব নকশা ফুটে উঠতে লাগলো চোখের ওপর। সেই থেকে রিফুকর্মে লেগে আছি। পাকা মাথায় কাঁচা বয়সের ভাবাবেগ নিয়ে কাজ– সতর্ক থেকেছি যাতে উল্লম্ফনের চিহ্ন না থাকে। অনেক লেখায় হাত দেওয়ার কোনো প্রয়োজন হয়নি। কেননা এত বছর পরেও তারা রয়ে গেছে প্রস্ফুটিত, তাজা, এই বইয়ের যেটুকু সুগন্ধ– তার মূল উৎস হয়ে। রিফুকর্ম একটি শিল্প — নতুন সুতোকে মিলিয়ে দেওয়া পুরনো সুতোর সঙ্গে, এমনভাবে, যাতে জোড়া লাগার কোনো চিহ্ন না থাকে।…”