এই লেখার পরিধি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং যুদ্ধোত্তর কয়েকটি বছর। এটি একটি বিশাল পরিবারের ছবি। যার অন্তরালে আছে পরিবারের একটি শিশুর দু'টি বিস্ময়াবিষ্ট চোখ, চারপাশের পরিবেশ, দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি এবং সর্বোপরি এমন একটা সময় যখন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ডামাডোলে সারা পৃথিবী জুড়ে চলছিল দুঃখ, দারিদ্র, দুর্ভিক্ষ, মৃত্যু ও হতাশা। এ লেখায় একসাথে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সংযোজন ঘটেছে। বহু লোকের আগমন এবং নিষ্ক্রমণ ঘটেছে। এই গ্রন্থের নায়ক কোন একক মানুষ নয়। সময় যেন এখানে কথা বলেছে। ব্যক্তিকে ছাপিয়ে ব্যক্তির চারপাশ, দেশকালের সীমানা পেরিয়ে ছুঁয়ে গেছে পৃথিবীর অগণিত মানুষের মনকে। একদিকে প্রকৃতির অফুরন্ত সম্ভারের মধ্যে পটিয়ার উন্মুক্ত নিসর্গ এবং দিগন্তপ্রসারী সবুজতা যেমন শিশুমনে কল্পলোকের বিশ্বাস- অবিশ্বাসের জগৎ তৈরী করেছে তেমনি কক্সবাজারের বিস্তৃত বেলাভূমি, সীমাহীন জলরাশি, দিগন্তরেখায় মিশে যাওয়া পাহাড়শ্রেণী আর অতন্দ্র প্রহরীর মত সমস্ত চরাচর জুড়ে মার্তণ্ড-প্রতাপের অফুরাণ আলোকচ্ছুটা শিশুজগতের বাতাবরণকে খুলে দিয়েছে। সেখানে সব কিছুই ধরা পড়েছে অবিকৃতভাবে। তাই এসডিও ফ্লেচারের আবির্ভাব হয় দেবদূতের মত, গোলাল আসে তার শারীরিক শক্তি নিয়ে। আমীর আব্দুল আলীম তার কাছে ইতিহাসে পঠিত মুসলিম শৌর্য বীর্যের যোগ্যতম উত্তরসূরী। আবার দক্ষিণাবাবুর স্বার্থপরতা, নীচতা, সাম্প্রদায়িকতার নগ্ন আচরণ লক্ষ্য করে শিশুমন শিউরে উঠেছে। তার কাছে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানুষ মনে হয়েছে ব্রাহ্মণ পরুষ দেবপ্রসাদ ভট্টাচার্যকে। ছোট ছোট ঘটনা, এক একটা চরিত্র নিয়েই প্রায় এক দশকের সময় উন্মোচিত হয়েছে 'স্মৃতির বালুকাবেলায়'।