অন্তরচারিতাই গল্পকার মোহাম্মদ আবদুল মাননান-এর অন্বিষ্ট। বহিরঙ্গে মানুষ কী, তারচেয়ে কেন এস এরূপ, তা খুঁড়তে গিয়ে চরিত্রগুলোর গহীন গোপনে আলোকসম্পাত করেন তিনি। ক্লেদজ পুষ্প, কখনো শুধুই , আবার কখনোবা মণি-মাণিক্য উঠে আসে। তার ঠাসবুনন বয়ানে টোল পড়ার অবকাশ নেই কৌত‚হলে। কখনো ভ্রæকুঞ্চন, কখনো সংশয় ছাপিয়ে পাঠক মমতা বোধ করবেন চরিত্রগুলোর গ্রন্থিমোচনপর্বে। একেকটি গল্প শেষ হয়েও আপাত-সমাপ্তির বিভ্রম রেখে যায়। সংকলনের ‘অর্ধেক-জীবন’ গল্পে সাহিনা প্রেমের এক মরীচিকা। তারই নিত্য-আরাধ্য বাবতো নিজেকে সোহেল। কর্কটব্যাধিতে অনিবার্য মৃত্যুর প্রহর গুণছে সে। তখন মাধুকরী নিশানা করতে কোনো বেগ পেতে হচ্ছে না সাহিনাকে। ‘অর্ধেক ভালোবাসা’ গল্পে প্রবঞ্চিত এই সোহেলকে দেখি জীবনের অস্তাচলে ডুকে যাওয়ার প্রাক্কালে কী ঔদার্যে বিপুল অংকের চেক লিখে দিয়ে যায় সাহিনারই নামে! হয়তো কৃতজ্ঞতায়, যতটুকু পেয়েছে তাতেই মুগ্ধ; অথবা যে প্রেমে ব্রতী চিলো সোহেল, জীবনের জীর্ণতা স্পর্শ করতে পারে না তা। বিশ্বাস-বেদনায় জারিত প্রেমকে শেষ অর্ঘ্যটুকু দিয়ে মরণোত্তীর্ণ করে গেল। ‘গারদ নম্বর ছয়’ মানবজীবনের চিরায়ত রংয়ে অঙ্কিত শিল্পকর্ম। চিত্রবিচিত্র খলতা আর ক্র‚রতায় অন্যের অনিষ্টের কুশীলব হতে অরুচি নেই এমনতরো ছদ্ম-জীবনবাদী মানবরূপী প্রাণীসঙ্কুল আমাদের পরিপার্শ্ব। সাধ্য কী তা কেউ রোধে যদি অরাজক রাজনীতি নামক দানব দাপিয়ে বেড়ায় চির-হতভাগ্য কোনো জনপদে। গ্রন্থবদ্ধ গল্পগুলো অচেনা প্রজাতিকে ঘিরে নয়। আপনার আমার নিত্যদিনের আদৃত-অনাদৃত পাত্রপাত্রী। লেখকের গভীর অন্তর্দৃষ্টি আর সমাজ-মনস্কতার মিলনে তাদেরই জীবনরেখা শৈল্পিক নির্মিত হয়ে উঠেছে মাত্র।
মোহাম্মদ আবদুল মাননানের পটুয়াখালীর বউফলে ১৯৬১ সালে জন্ম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর। প্রকাশিত গ্রন্থ-কাব্য ৩টি, ছোটগল্প ৬টি, সম্পাদিত গ্রন্থ ১০টি।