“বাংলা: লেখক ও সম্পাদকের অভিধান” বইয়ের ফ্ল্যাপ কথা: ভাষা,বাক্য, শব্দ, অর্থ ব্যাকরণবিধি ও বাগধারা, এবং প্রাসঙ্গিক অন্যান্য নানা ক্ষেত্রে যা শুদ্ধ রীতি বলে মান্য হবার যোগ্য, তারই ব্যবহারবিধির অন্তর্ভুত গ্রন্থমালা। ভাষা যদি হয় একের ভাবনাকে অন্যের কাছে পৌছে দেবার মাধ্যম, তা হলে কীভাবে সেই মাধ্যমকে ব্যবহার করা সংগীত, বাক্যের গঠন ও শব্দনিবাচনাই বা কেমন হওয়া উচিত, আবার যা আমাদের স্বাভাবিক বাগধারা, তার সঙ্গেই বা আমাদের ভাষার সংগতি তারই পন্থা নির্দেশ করছে। ভাষার উদ্ভব, বিকাশ ও রূপান্তর—একে-একে সবই এসে যাচ্ছে এই গ্রন্থমালার পরিকল্পিত বৃত্তে । একই সঙ্গে ভাবা হচ্ছে এমন কয়েকটি কোষগ্রন্থ ও শব্দাভিধানের কথাও, ঠিক যে-ধরনের কোষগ্রন্থ ও অভিধান ইতিপূর্বে অন্তত বাংলা ভাষায় রচিত হয়নি । যাঁর যে-বিষয়ে চচা অথবা আঁধকার, তাঁরই উপরে ন্যস্ত সেহ বিষয়ে গ্ৰন্থরচনার দায়িত্ব । ব্যবহারবিধি-গ্ৰন্থমালায় প্রকাশিত প্রতিটি অভিমতই যে আনন্দবাজার পত্রিকার, এমন নয়। কিন্তু তাতে কিছু আসে-যায় না। এই পত্রিকা আসলে এ-ক্ষেত্রেও তৈরি করে তুলতে চায় এমন একটি পরিমণ্ডল, নানা বিষয়ে পারঙ্গম ব্যক্তিরা যেখানে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে আপনাপন অভিমত ও সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করতে পারবেন ।
সূচীপত্র: * ভূমিকা * কেন এই অভিধান * কী আছে এই অভিধানে * এই অভিধানে ব্যবহারের নিয়ম * সহায়ক গ্রন্থের তালিকা * এই অভিধানে ব্যবহৃত সংকেতের ব্যাখ্যা * লেখক ও সম্পাদকের অভিধান * পরিশিষ্ট ১ * পরিশিষ্ট ২ * পরিশিষ্ট ৩ * পরিশিষ্ট ৪
ভূমিকা: এই অভিধানটির পরিকল্পনা আনন্দবাজার পত্রিকা লিমিটেডের প্রধান সম্পাদক শ্ৰী অভীক সরকারের । বাংলাভাষায় এই ধরনের একখানি অভিধান সংকলিত হলে একদিকে বাংলাভাষা-চাচায় এমন একটি বই পেয়ে উপকৃত হবেন এই ছিল পরিকল্পনাটির ভিত্তি। এক হিসাবে এটি বাংলায় অভিনব অভিধান । এবং এমন একটি অভিধান রচনার দায়িত্ব দিয়ে শ্ৰীসরকার আমাকে সম্মানিত করেছেন নিঃসন্দেহে। শুধু তাই নয়, প্রয়াজোনীয় বই জুগিয়ে তিনি আমার কাজ সহজও করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ । এই অভিধান রচনার বিভিন্ন পযায়ে এবং সাধারণভাবে আমার অভিধানচর্চায় অনেকের কাছ থেকেই উপদেশ পরামর্শ ও সাহায্য পেয়েছি। তাঁদের মধ্যে শ্ৰীনীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, শ্ৰীশঙ্খ ঘোষ, শ্ৰীপবিত্র সরকার এবং শ্রীরমেন ভট্টাচার্যের নাম সবাগ্রগণ্য। এসব ক্ষেত্রে শ্ৰীনিখিল সরকার (শ্ৰীপান্থ) আড়ালে থাকতেই ভালোবাসেন। কিন্তু তাঁর অভিভাবকসুলভ নির্দেশনা আমার মস্ত সহায়। আর শ্ৰীবাদল বসুর সাহায্য ও পরামর্শ তো অবিস্মরণীয়। এই বইয়ের প্রকাশন-সংক্রান্ত যাবতীয় বিশেষজ্ঞতার অধিকারী তিনি ।
লেখকের কথা: যারাই লেখেন, তাঁরাই অনুভব করেন যে, লিখতে গেলে কত ধরনের সমস্যা দেখা দেয় । ২৫শে বৈশাখ লিখব, না ২৫ বৈশাখ ? ২ মার্চ না। ২রা মার্চ ? সাল বোঝাতে ৯৪ না ’৯৪ ? তেলেগু না তেলুগু ? প্লাষ্টার না প্লাস্টার ? ইংগেট নাইনগট ? মনেই পড়ে না, কবে বেরিয়েছিল রবীন্দ্রনাথের ‘নৌকাডুবি বা নজরুলের ‘অগ্নিবীণা' কিংবা ক্ষীরোদাপ্রসাদের ‘আলিবাবা’ । কবে জন্মেছিলেন কবি তরু দত্ত ? মৃত্যুই বা কোন সালে ? কখন কমা, হাইফেনই বা কখন ? একই ধরনের সমস্যা দেখা দেয় সম্পাদনার ক্ষেত্ৰেও । সতর্ক, অসতর্ক, বানান-জানা, না-জানা-হরেক লেখকের হরেক বিষয়ে লেখার প্রেসকপি তৈরি করেন সম্পাদক । ৩থ্যের যথার্থতা, যতিচিহ্নের শুদ্ধতা, বানানের সমতা-প্রতিটি ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হয় তাঁকে । লেখালেখি ও সম্পাদনার কাজের সূত্রে তাই কেবলই হাতড়ে বেড়ান নানান কোষগ্রন্থ, অভিধান, আনুষঙ্গিক গ্ৰন্থরাজি ইংরেজি ভাষার লেখক-সম্পাকদের হাতের নাগালে কিন্তু নানান সহায়ক অভিধান । যেমন, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের রাইটার্জ ডিকশনারি কিংবা পেঙ্গুইন ডিকশনারি ফর রাইটার্জ অ্যান্ড এডিটর্জ। সংশয় দেখা দিলেই এই ধরনের অভিধানের উপর একবার চোখে বুলিয়ে নেন। তাঁরা। অথচ বাংলা ভাষায় এই জাতীয় অভিধান একটিও নেই। সেই অভাব মেটাতেই এই সংগ্রহের পরিকল্পনা । বাংলা ভাষার প্রতিটি লেখক, পাঠক, সম্পাদকের নিয়ত প্রয়োজনের কথা ভেবে রচিত হয়েছে অনন্য এই অভিধান। এখানে রয়েছে বহু ধরনের তথ্য, বহু সংশয়ের নিরসন । শব্দ ও ভাষা ব্যবহারের, বানান ও বিরামচিহ্নের প্রয়োগের নিয়মকৌশল । এমন বহু কিছু, জরুরি সব-কিছু।
জন্ম বরিশালে ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯। স্নাতক প্রেসিডেন্সি কলেজ ও স্নাতকোত্তর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। লেখালিখি ও চর্চা প্রধানত অভিধান, ভাষাতত্ত্ব ও ইতিহাসে, কখনো-বা সংগীত বিষয়ে। একক প্রচেষ্টায় সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন দশ-বারোটি অভিধান, লিখেছেন পাঁচ ছটি ভাষা বিষয়ক গ্রন্থ। প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে ‘আধুনিক বাংলা প্রয়োগ অভিধান’, ‘বাঙালির ভাষা’, ‘ভাষা ও শৈলী’, ‘ভাষাদিগন্তে নতুন আলো’, ‘বাংলাভাষা চর্চা’, ‘ভাষার তত্ত্ব ও বাংলা ভাষা’, ‘বাংলা উচ্চারণ অভিধান’, ‘ইতিহাস অভিধান’ (প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড), ‘স্বপ্নের ভুবন : রবীন্দ্রনাথের গান’, ‘বিবিধ বিদ্যার অভিধান’, ‘তিষ্ঠ ক্ষণকাল’, ‘ভাষাকোশ’, ‘তোমাদের রবীন্দ্রনাথ’ ইত্যাদি। সম্পাদিত গ্রন্থ ‘সংসদ বাংলা অভিধান’, Samsad English-Bengali Dictionary, Samsad Bengali-English Dictionary ইত্যাদি। পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার (১৯৮৪), বিদ্যাসাগর স্মৃতি পুরস্কার (২০০৭), চণ্ডীগড় প্রাচীন কলাকেন্দ্র সম্মান (২০০৯)। সাহিত্য সংসদের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য।