৩রা মার্চ, ১৫৭৫। তুকারয়ের ময়দানে প্রানপণ লড়াই শেষে মুঘল আর বাঙ্গালী সালতানাত দুই পক্ষই বিদ্ধস্ত। ক্লান্তি আর ধ্বংসযজ্ঞে কার ক্ষতি বেশি সে হিসাব কষে কার সাধ্যি! তবে বাঙ্গালাহর সেনাপতি গুজর খান নিহত, আহত জুনায়েদ কররানি মালাকুল মউতের অপেক্ষায় আর সুলতান দাউদ কররানি পলাতক। তাই রক্তাক্ত শমসের আর হাজার বছরের পরম্পরার ফয়সালা—বাংলা-বিহার আজ থেকে বাদশাহ আকবরের অধিকার। সে অধিকার ফলানোর জন্য এখন শুধু দখল দেওয়া বাকি! নদী-চর-খাল-বিল আর জলা-জঙ্গলে জড়ানো এই বাংলার দখল নেওয়ার একমাত্র উপায় হলো নৌকা। তাই শত শত রণকোষা আর জাহাজ সাজিয়ে হাজির হলো সুবিশাল নৌবহর—মুঘলদের ‘বাদশাহি নাওয়ারা’। সুলতান স্বেচ্ছায় দাবি ছেড়ে দেওয়ায় দখলের কাজটা হওয়ার কথা ছিল রীতিমতো জলবৎ তরলং! কিন্তু নাওয়ারার প্রধান সেনাপতি ‘মির বহর’ শাহ বরদি শীঘ্রই টের পেলেন, বাংলার জল-হাওয়া আর যাই হোক, সরল-সোজা কোনো বস্তু নয়। গভীর ব্রহ্মপুত্রের কালচে সবুজ জলে সে বিশাল সাম্রাজ্যবাদী নাওয়ারার পথ আটকে দাঁড়ালেন সরাইল পরগনার ক্ষুদ্র জমিদার। শুরু হলো অসমসাহসী সেই বাঙালি ভূঁইয়ার উত্থান। জন্ম নিল এমন এক কিংবদন্তি, যার সামনে ম্লান হয়ে যায় রূপকথার হাজারো ডালিমকুমার। নাম তার ঈশা খাঁ। লোকে ডাকত মসনদ-ই-আলা। আর সেই গল্প সাজিয়ে নিয়েই উপন্যাসের প্রথম কিস্তি, এক যে ছিল বাঙ্গালাহ-১—ঈশা খাঁ।