কুমুদ প্রথম প্রথম কিছুটা ভয় পেলেও পরক্ষণেই সাহসিকতার সাথে প্রশ্ন করল, “কে?” কিয়ৎক্ষণ পর সে শুনতে পেল জানালার বিপরীত দিক থেকে তার প্রেমিক পুরুষের কণ্ঠস্বর। আকুলতা মিশ্রিত কণ্ঠে সে বলছে, “কুমুদিনী, আমি এসেছি। এই অধমের জন্য অভিমানের জানালাটা একটু খোলা যাবে কি? আপনার মুখখানা দর্শন করতে না পারলে ঘুমের সাথে আমার সম্পর্ক ছিন্ন হবে যে!” কুমুদের চোখে জলের আভাস৷ আস্তে ধীরে বিনা শব্দে জানালা খুলে দিলো সে। জানালা খুলতেই অন্ধকার মিশ্রিত পরিবেশে আপন পুরুষের অস্তিত্ব নজরে এলো তার। চোখ নামিয়ে কপট রাগ জড়ানো প্রশ্ন ছুঁড়ল সে নিজ প্রেমিকের উদ্দেশে, “এত রাতে এখানে কী আপনার?” প্রেমিকার মিছেমিছি রাগ বুঝতে পেরে রবীর মুখে প্রসন্নতার হাসি ফুটে ওঠে। টর্চ লাইটটা জ্বালিয়ে সেটার ওপর হাত রাখে আলোর ঝলমলানি কমিয়ে আনতে। মৃদু আলোতে কুমুদের শুকনো মুখটির দিকে তাকিয়ে বলে, “দেখা দেননি কেন আমায়? আপনি তো জানেন, আপনার কোমল মুখখানি দেখে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যেস হয়েছে আমার। অভ্যাস বদলে দিতে চাচ্ছেন কেন?” কুমুদের অশ্রু জমা চোখ হেসে ওঠে লজ্জায়। লজ্জা লুকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে মেয়েটি। “এত দেখতে হবে না। রাতের অন্ধকারে এখানে এসেছেন, লোকে জানলে কী হবে ভাবতে পারছেন? দেখে ফেললে প্রচুর মার খেতে হবে কিন্তু!” “আমি নির্দ্বিধায় সেই মার নিতে রাজি। আপনাকে দেখার অপরাধে ফাঁসি হলে, আমি গলা পেতে নেব সেই দড়ি। তবুও আপনাকে দেখার লোভ ছাড়তে পারব না।” কুমুদ মুখ ভেংচিয়ে বলে, “বেশ ভালো কবিতা বলছেন তো ইদানীং! কবি হয়ে যাচ্ছেন নাকি? মার খেলে এভাবে দেখতে আসার ভূত নেমে যাবে মাথা থেকে।” “নামুক ভূত, কিংবা কপালে শনি আসুক। আপনি বললে, আমি মরতে রাজি এক্ষুনি, এক্ষুনিই।”